ভুয়ো খবর প্রচারই বঙ্গে বিজেপির রণকৌশল
ভোটের আগে ভুয়ো খবর সম্প্রচার করাই যেন অমিত মালব্যরা ২১-এর রণকৌশল হিসেবে বেছেছেন।
বার বার অভিযোগ উঠলেও মিথ্যে খবর প্রচার থেকে বিরত হয়নি বিজেপির আইটি সেল। এই সেলের প্রধান অমিত মালব্য (Amit Malaviya) দেশের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী যার টুইট ‘ভুয়ো’ বলে চিহ্নিত করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। তার পরেও দু’কান কাটা এই দল সম-উদ্দীপনায় ভুয়ো খবর প্রচারেই নিমগ্ন।
বাংলার আসন্ন বিধানসভা (West Bengal Assembly Election 2021) ভোটের আগে ভুয়ো খবর সম্প্রচার করাই যেন অমিত মালব্যরা ২১-এর রণকৌশল হিসেবে বেছেছেন। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাই এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ:
প্রথম উদাহরণ
গত ২৩ শে জানুয়ারি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মদিবস পালনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যখন বক্তব্য দিতে ওঠেন, তখন বিজেপির অনুগামীরা রাজনৈতিক স্লোগান দিতে শুরু করেন। নেতাজির মতো একজন দেশনায়কের জন্মদিবসের অনুষ্ঠানকে কলুষিত করার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে বক্তব্য না রেখেই নেমে যান। তিনি বলেন, এটি সরকারি অনুষ্ঠান রাজনীতি করার জায়গা নয়।
নেটিজেনরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হলে, বঙ্গ বিজেপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। যেখানে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ইসলামের একটি কালমা পাঠ করছেন। এবং বিজেপির পক্ষ থেকে লেখা হয়, ‘মমতা পিসি, আপনি যদি সরকারি অনুষ্ঠানে ইসলামের কালমা পাঠ করতে পারেন, তাহলে কেউ জয় শ্রী রাম বললে দোষ কোথায়’?
কিন্তু আসল বিষয়টি হল, সেই ভিডিওটি একটি বক্তৃতার সম্পাদিত অংশ। পুরো ভিডিওটি দেখলে বোঝা যাবে, সেই বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সব ধর্মের মন্ত্রোচ্চারণ করেছেন। অর্থাৎ, তিনি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছেন। সেই ভিডিওটিরই একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে ভুয়ো খবরের প্রচার চালায় বিজেপি।
দ্বিতীয় উদাহরণ
গত ১৯শে জানুয়ারি ধুপগুড়িতে একটি পথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হন। ২০শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী টুইট করে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেন। তার কিছুক্ষণ পরেই রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব, সরকারের তরফ থেকে নিহতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০, ০০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেন।
পরের দিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, সরকার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাথেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। তাঁর কথায়, ‘ক্ষতিপূরণেও মুসলিম তোষণ, মালদায় ৬ জন মুসলিম বিস্ফোরণে মারা যায়, তাদের জন্যে মেয়র ফিরহাদ হাকিম হেলিকপ্টার করে মালদায় ছুটে যান। আর ধুপগুড়িতে ১৪ জন হিন্দু মারা গেলেন তা নিয়ে সরকারের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। রাজ্য সরকারকে আর তোষণ করতে হবে না’।
দিলীপ ঘোষ এখানে যে বিস্ফোরণের কথা বলেন, সেটি ২০২০ সালের ১৯শে নভেম্বর বিকেলে হয়েছিল। বিজেপি বিলম্ব না করেই এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে এনআইএ তদন্তের দাবি তোলে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim) বিষয়টির তদন্তের জন্যে পাঠান। এই ঘটনাটিকেও অন্যভাবে প্রচার করে বিজেপি।
তৃতীয় উদাহরণ
দিলীপ ঘোষ নেতাজির একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন, নেতাজি নাকি সাভারকারের প্রশংসা করেছিলেন। পরে জানা যায় এই উক্তিটি আসলে ২০১৩ সালে স্বরাজ্য ম্যাগাজিনে ধনঞ্জয় কিরের লেখা সাভারকারের জীবনী থেকে নেওয়া। যেখানে লেখক সেই উক্তির কোন উৎস উল্লেখ করেননি।
আসলে, ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবে সাহায্য চাইতে সাভারকার এবং জিন্নার সাথে নেতাজি সুভাষ বৈঠক করেন। পরে নেতাজি বলেন, সাভারকার দেশের কথা নয় শুধু হিন্দুদের স্বার্থের কথা ভাবছেন। এই উক্তিটিকেই বিকৃত করে বলা হয় সাভারকারের প্রশংসা করছেন নেতাজি।
এভাবেই বিজেপি একের পর এক মিথ্যে খবর প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এরপর মানুষই বিচার করবেন তারা সত্যকে বাছবেন না মিথ্যাকে। একুশের নির্বাচনের আগে যে মিথ্যার ভাণ্ডার উজাড় করে দেবে বিজেপি (BJP), তা বলাই বাহুল্য।