পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সে বিজেপিকে মুছে ফেলার ডাক গুরুংয়ের
ধর্মীয় স্লোগান ব্যবহার করে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। সোমবার নাগরাকাটার সিপচুতে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিমল গুরুং (Bimal Gurung) বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে এ কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, মোদিজির বোঝা উচিত ছিল বাংলায় হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের লোক বসবাস করেন। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে রাজনৈতিক স্লোগান বানানো যায় না। এটা বিজেপিকে পাল্টাতে হবে। পাহাড় থেকে সমতল, তরাই-ডুয়ার্সে বিজেপিকে মুছে ফেলার আহ্বান জানান তিনি। অন্যদিকে, গুরুং স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে একমঞ্চে প্রচারে যাবেন না। এদিন সিপচুতে বিমলের সভায় স্থানীয় তৃণমূল (Trinamool) নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিন ভিড়েঠাসা সভায় গুরুং বিজেপির বিরুদ্ধে আগাগোড়া আক্রমণাত্মক ছিলেন। ওই দলকে ধোঁকাবাজ বলে আক্রমণ করেন। এমনকি মঞ্চ থেকেই প্রতিজ্ঞা করেন, পাহাড় থেকে সমতল, তরাই থেকে ডুয়ার্স সব জায়গা থেকেই বিজেপিকে বিতারিত করতে হবে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) এবারের বিধানসভা ভোটে জিতিয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করতে মরিয়া প্রয়াস চালাবেন বলেও তিনি ঘোষণা করেন।
মোর্চা সুপ্রিমো বলেন, দিদি যখন বসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তখন আমি বসিনি। কারণ সেই সময় বিজেপির সঙ্গে জোট করেছিলাম। বিজেপিকে বিশ্বাস করেছিলাম। মোদিজিকে আমি বলেছিলাম, পাহাড়-ডুয়ার্সে বসবাসকারী ১১টি জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দিন। তিনি আমাদের বলেছিলেন দিল্লিতে আসুন। তাই লোকসভা ভোটে ওদের সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু আট বছর হয়ে গেল আজও আমাদের দাবি নরেন্দ্র মোদি মেটাননি। আগামিদিনেও যে দাবি মিটবে সেটা অনিশ্চিত। মোদিজি, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা (JP Nadda) সকলেই কথা দিয়েছিলেন কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তাই যাঁরা কথা রাখতে পারেন না, তাঁদের সঙ্গে থেকে লাভ নেই। সেই কারণে ওদের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছি। আমরা ওদের সঙ্গে নেই। দেরিতে হলেও বুঝেছি, আমাদের সমস্যা যদি কেউ মেটাতে পারেন তিনি মমতাদিদি। তাই এবারের বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021) দিদিকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। দিদিকে জেতাতে পাহাড় থেকে সমতল, তরাই থেকে ডুয়ার্স অলিগলিতে গিয়ে প্রচার করব। কোথায় তৃণমূল প্রার্থী দেবে, কোথায় আমরা প্রার্থী দেব তা জানতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শীঘ্রই বসব। আমাদের প্রার্থীকে জেতাতে তৃণমূল কর্মীরা সহযোগিতা করবেন, আমরাও তাদের প্রার্থীকে জেতাতে প্রাণ দিয়ে লড়ব। তবে আমরা নিজেদের প্রতীক নিয়েই লড়ব।
গুরুং বলেন,একসময়ে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ঝান্ডা ধরার লোক ছিল না। আমরা ওদের সমর্থন করেছি। পাহাড় বিধায়ক পেয়েছে, এমপিও বিজেপির। ওরা আমাদের দাবি নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এর জবাব ওদেরই পেতে হবে। যেভাবে বিজেপিকে পাহাড়ে আমরা জিতিয়ে এসেছি, এবার সেভাবেই তৃণমূলকে পাহাড় থেকে তরাই-ডুয়ার্স সর্বত্র জিতিয়ে দেখাব। তৃণমূল কর্মীদের বলব, ভয় পাবেন না বিজেপিকে। বুক চিতিয়ে এবারের নির্বাচনে ওদের জবাব দিন। বাংলা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতেই হবে।
এদিনের জনসভায় ডুায়ার্সের বীরপাড়া, বানারহাট, ঝালং, বিন্দু, গোরুবাথান, জয়গাঁর পাশপাশি পাহাড়ের দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক, কালিম্পং, এমনকী সমতল শিলিগুড়ি থেকেও বিমলপন্থী মোর্চার কর্মী সমর্থকেরা এসেছিলেন। সভায় বিমল ছাড়াও রোশন গিরি, রমেশ আলে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের গণেশ ওঁরাও, তৃণমূলের নাগরাকাটা ব্লক সভাপতি মনোজ মুণ্ডা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।