বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দলেরই এক নেত্রীর
বিজেপির(BJP) বিষ্ণুপুর(Bishnupur) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দলেরই এক প্রাক্তন জেলা সম্পাদিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে এই অভিযোগের একটি ভিডিও বার্তা মোবাইলে ছড়ানোয় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদিকা ওই ভিডিওতে বলেছেন যে, বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি(Sujit Aghasti) তাঁকে ধর্ষণের(Rape) চেষ্টা করেছেন। বাধা দিতে গিয়ে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধ্বস্তিও হয়েছে। তার প্রমাণ হিসাবে তিনি নিজের হাতের কাটা অংশ দেখিয়েছেন। এর পাশাপাশি সভাপতির বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। যদিও এনিয়ে ওই নেত্রী থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি।
সুজিতবাবু অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের কাছে তাঁকে হেয় করার জন্য এধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। এই ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্ব বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
ওই নির্যাতিতা বিজেপি নেত্রী ফোনে বলেন, সুজিতবাবু বেলিয়াতোড়ে মিটিং করতে এসে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানাতে ওই ভিডিও আমি বানিয়েছি। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, সুজিতবাবু তাঁকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। তার প্রমাণ হিসাবে তিনি নিজের হাতে একটি কাটা অংশ দেখান। তারপরেই তিনি সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের কাছে আর্জি জানান। সুজিতবাবু বলেন, অভিযোগকারী নেত্রী একসময় দলের সম্পাদিকা ছিলেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে পদ থেকে সরানো হয়েছিল। তিনি পুনরায় তাঁকে ওই পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। কিন্তু আমাদের দলে তো চাইলেই পদ পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে তা অর্জন করতে হয়। পদ না পাওয়াতেই উনি আমার বিরুদ্ধে এরকম অপপ্রচার করছেন। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। ওঁর বিরুদ্ধে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
বিষ্ণুপুরে গোষ্ঠী কোন্দলে বিজেপি এমনিতেই জেরবার। দলে দু’টি শিবির সক্রিয় থাকায় বিভিন্ন সময়ে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট হওয়ায় কিছুদিন আগে সাংগঠনিক সভাপতি হরকালি প্রতিহারকে সরিয়ে বড়জোড়ার মালিয়াড়ার নেতা সুজিত অগস্তিকে বসানো হয়। কিন্তু তিনি পদে বসার পরেও দলের অস্বস্তি বেড়েছে। কারণ সুজিতবাবুকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নেতাকে নিয়ে আপত্তিকর ভিডিও এর আগেও সামনে এসেছে।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুজাতা মণ্ডল খাঁ বলেন, বিজেপিতে মহিলা কর্মীরা সুরক্ষিত নন। মেয়েদের সম্মান প্রতি পদে পদে ভূলুণ্ঠিত হয়। সেই কারণে আমি বিজেপি ছেড়েছি। উত্তরপ্রদেশে যোগীরাজ্যে মহিলারা প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হচ্ছেন। বিজেপি এরাজ্যে এলে এখানেও একই অবস্থা হবে। বিষ্ণুপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন নেত্রী হয়েও যদি ওই দলে সুরক্ষিত না হন তাহলে সাধারণ মানুষের কী হাল হবে, বোঝাই যাচ্ছে।’
ওই ভিডিওটি মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাওয়ার গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। মূহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। ভোটের মুখে জেলার পদাধিকারীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় বিজেপি নেতৃত্ব মুখ লুকনোর জায়গা পাচ্ছে না।