তারাপীঠে শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ করলেন সুজাতা
তারাপীঠে(Tarapith) এসে পুণ্যভূমিকে অপবিত্র করে গিয়েছেন বিজেপির(BJP) নেতারা। সেই অশুদ্ধ, অপবিত্র দলে রয়েছেন তাঁর স্বামীও। তাই বুধবার মাঝরাত থেকে ভোর অবধি ছ’ঘণ্টা ধরে তারাপীঠ মহাশ্মশানে শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ করলেন তৃণমূল(TMC) নেত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ(Sujata Mondal Khan)। গেরুয়া শিবিরকে যোগ্য জবাব দেওয়ার এই কৌশল রীতিমতো রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। তবে, এই যজ্ঞে বীরভূমের কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারীর উপস্থিতি রাজনৈতিক জল্পনা বাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে এক সভার মাধ্যমে পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। যদিও সেই সভায় আশানুরূপ লোক সমাগম না হওয়ায় দলের অন্দরে গুঞ্জন চলছে। এরই মধ্যে বুধবার রাতে তারাপীঠে আসেন সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুজাতা খাঁ। তিনি বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের স্ত্রী। তাঁর মতে, বিজেপির নেতারা তারাপীঠে এসে তীর্থভূমির পবিত্র মাটিকে অশুদ্ধ করেছেন। তাই মায়ের কাছে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মহাশ্মশানে মায়ের পাদপদ্মে শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ করা হয়েছে। রীতিমতো প্যান্ডেল খাটিয়ে প্রথমে কুমারী পুজো ও পরে রাত ১১টা নাগাদ সেই যজ্ঞ শুরু হয়।
যদিও যজ্ঞের সময় সেখানে কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতির উপস্থিতি নিয়ে তাঁর দলবদলের জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে, সঞ্জয়বাবু বলেন, এখনও কোনও দলে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। শুধুমাত্র পুজো ও যজ্ঞে অংশ নেওয়ার জন্যই আসা। গভীর রাতে যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে আহুতি দেন সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়ও। শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ দেখতে বহু পুণ্যার্থীও ছিলেন।
সুজাতাদেবী বলেন, তারাপীঠ একটি পবিত্র জায়গা। যেখানে বামদেব ও বশিষ্ঠদেব সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সেখানে জালি ও দাঙ্গাবাজ পার্টির নাড্ডা, গাড্ডা, চাড্ডারা এসে পুণ্যভূমিকে অশুদ্ধ করে গিয়েছেন। তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে তা কোনওদিন মেনে নিতে পারব না। তাই তীর্থভূমিকে শুদ্ধিকরণ করতেই এই যজ্ঞ। যজ্ঞে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে পুনরায় ক্ষমতা আসেন ও রাজ্যবাসীর মঙ্গল হয় সেই কামনাও জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সৌমিত্ররও শুদ্ধিকরণ দরকার। উনি ওই দলের নেতা। উনিও তো অশুদ্ধকরণে শামিল ছিলেন।
এরাজ্যে নারীরা সুরক্ষিত নয় বলে জেপি নাড্ডার বক্তব্যের পাল্টা সুজাতাদেবী বলেন, বিজেপির বিষ্ণপুর জেলার সাংগঠনিক সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁদের নেত্রী ধর্ষণের মামলা করেছেন। যেদিন প্রধানমন্ত্রীর হলদিয়ায় সভা ছিল, সেদিন বিজেপির যুব মোর্চার সম্পাদিকাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছেন এক বিজেপি নেতা। তাই যাঁদের ঘরে ঘরে হাতরাস ঘটছে, তাঁদের মুখে এই কথা মানায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে না গিয়ে ওরা নিজেদের শুদ্ধ করলে বেশি ভালো হয়।
এ ব্যাপারে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, বিজেপি সোনার বাংলা গড়বে। কে কোথায় পুজো করল সেটা দেখে লাভ নেই। জয় শ্রীরাম বলতেই যে দল ভয় পায়, সেই দলে যে নাম লিখিয়েছে তাদের তারাপীঠে যজ্ঞ করা উচিত নয়। প্রসঙ্গত, ২১ ডিসেম্বর আচমকাই বিজেপি ছেড়ে সৌগত রায় ও কুণাল ঘোষের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা মণ্ডল খাঁ। ওইদিনই নিজের সল্টলেকের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্রবাবু। ২২ডিসেম্বর ডিভোর্সের নোটিসও পাঠান। তারপর অবশ্য সৌমিত্র-সুজাতা নিজেদের মতো করেই পথ চলছেন। যদিও এদিন ডিভোর্স প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন দু’জনেই।