শিশুদের জন্মগত রোগের চিকিৎসা – দেশের প্রথম ইনস্টিটিউট হচ্ছে পিজিতে
ভোটের মুখে নিজের স্বাস্থ্যদপ্তরে(Health Dept) মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সসম্মানে গুরুদায়িত্ব দিয়ে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে জাতীয় স্তরের খ্যাতিসম্পন্ন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ সিংকে(Dr Arun Singh)। মমতা ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর ডাঃ সিংকে প্রথমে পিজি হাসপাতাল(PG Hospital) থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। ডাঃ সিংয়ের সময়কালে পিজিতে অনুদানের টাকা খরচ নিয়ে অনিয়ম প্রসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্যদপ্তর। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের(National Health Mission) দায়িত্বের জন্যও রাজ্য ছেড়ে যেতে চাইলেও, সরকার তাঁকে নানা বাহানায় ছাড়তে চায়নি—এমনই অভিযোগ উঠেছিল। অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রমের সিনিয়র পরামর্শদাতা সেই ডাঃ সিংকে পিজি হাসপাতালে ফের ফিরিয়ে আনছেন মমতা। শুক্রবার এমনই খবর মিলেছে স্বাস্থ্যদপ্তরের শীর্ষ সূত্রে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমতো পিজি হাসপাতালে দেশের মধ্যে এই প্রথম তৈরি হতে চলেছে বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটি ও বিভিন্ন জটিল রোগের উৎকর্ষকেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব পেরিনেটোলজি। ডাঃ সিং সেই ইনস্টিটিউটের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে কাজে যোগ দিচ্ছেন। শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, আমরা পিজি হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব পেরিনেটোলজি তৈরি করছি। সেখানকার প্রধান পরামর্শদাতা হচ্ছেন ডাঃ অরুণ সিং। শীঘ্রই ইনস্টিটিউটটির কাজ শুরু হবে।
তারপর ধাপে ধাপে বড় আকারে করা হবে। প্রসঙ্গত, ডাঃ সিং পিজির সদ্যোজাত শিশুরোগ বিভাগের প্রধান থাকার সময় একদা মমতা ঘনিষ্ঠ শিশুরোগ চিকিৎসক ডাঃ ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে তৈরি মুখ্যমন্ত্রীর টাস্ক ফোর্সের প্রাক্তন প্রধান ত্রিদিববাবুকে কিছুদিন আগেই বিজেপির চিকিৎসক সংগঠনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ডাঃ সিংয়ের ঘরে ফেরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ—এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এদিন অরুণবাবুর সঙ্গে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।
চিকিৎসকমহল সূত্রের খবর, বর্তমানে বাংলায় সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর হার ১৫.৫। জাতীয় প্রেক্ষিতে বাংলা অনেকটা এগলেও এখনও ১০-এর নীচে নামানো যায়নি সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর হার। সেদিক থেকে শিশুদের মেনিঙ্গো মায়ালোসিলি, জন্মগত হার্টের অসুখ ইত্যাদি জন্মগত ত্রুটিতে যথাসময়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা মিললে কিছুটা হলেও এই হার কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যদপ্তরের পদস্থ সূত্র জানিয়েছে, পেরিনেটোলজি বিদ্যায় মাতৃগর্ভে ২০-২৮ সপ্তাহ বয়সের ভ্রূণ থেকে এক মাস বয়স পর্যন্ত সদ্যোজাতের যাবতীয় অসুখের চিকিৎসা হয়। এই ইনস্টিটিউটে এই সময়সীমা ছাড়াও দু’বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের যাবতীয় জটিল রোগের চিকিৎসা হবে। ডাঃ মালা ভট্টাচার্য, ডাঃ অসীম মল্লিক প্রমুখ রাজ্যের নামজাদা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, দারুণ উদ্যোগ। এই ধরনের ইনস্টিটিউট ভারতের কোথাও আছে বলে জানা নেই।