রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

প্রার্থী বাছাইয়ে বিজেপিতে কোন্দল, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

February 18, 2021 | 2 min read

ভোট যত এগিয়ে আসছে, টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে বিজেপিতে। প্রার্থী করার টোপ গিলে অনেকেই দল বদলে গেরুয়া শিবিরে ঢুকেছেন সাম্প্রতিককালে। প্রার্থীপদ নিয়ে ‘দলবদলু’দের চাপ ক্রমাগত বেড়ে চলায় আখেরে বিপাকে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। এই অবস্থায় আর টিকিট বিলির রাশ রাজ্যের হাতে ছাড়তে চাইছে না দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। বলা ভালো, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বা ‘বহিরাগত’ নেতাদের উপরও তেমন ভরসা করছেন না মোদি-শাহ’রা। কারণ সুতো আলগা করলেই স্বজনপোষণের সূত্র ধরে প্রার্থীপদ পেয়ে যাবেন অনুগামীরা। তাই লাগাম নিজের হাতেই রাখছেন অমিত শাহ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও অন্যতম পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় আলাপচারিতায় একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

বিধানসভা ভোটে (West Bengal Election 2021) ‘টিকিট পাইয়ে দেব’, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক মাঝারি কিংবা ছোট মাপের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের গেরুয়া জালে তুলেছে বিজেপি। দল ভাঙানোর খেলায় কে এগিয়ে, তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন দলের নেতারা। এমনকী, যাঁরা সদ্য এসেছেন দলে, তাঁদের মধ্যেও অনেকে নাম লিখিয়েছেন এই প্রতিযোগিতায়। লক্ষ্য একটাই, মোদি-শাহ’র কাছে নম্বর বাড়ানো। সূত্রের দাবি, টিকিট বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যজুড়ে অসন্তোষের আঁচ পাওয়ায় নির্বাচনী কমিটি গড়তে সাহস পাচ্ছে না। গত পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভা ভোট পরিচালনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছিল বিজেপি। সেখানে তৃণমূলের এক প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেতাকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গোটা দেশেই এই পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। ভোটের অন্তত চার-পাঁচ মাস আগেই তৈরি এই কমিটি। কিন্তু এবার এ রাজ্যের ভোটে উল্টো পথে হাঁটছে পদ্ম শিবির। টিকিট বিলি থেকে ভোটের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের জন্য আর আলাদা করে কোনও কমিটি গড়া হবে না। আহ্বায়ক পদেও কাউকে রাখা হবে না।

দলীয় সূত্রের খবর, এই ধরনের কমিটি বা পদাধিকারীরা টিকিট বিলি করলে নির্ঘাৎ স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠবে। যা সামলানো দায় হয়ে পড়বে নেতৃত্বের। কোন্দল এড়াতেই তাই এই পদক্ষেপ। গোটা বিষয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র প্রতিক্রিয়া, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন নিয়মিত বাংলায় আসছেন, থাকছেন। ফলে আলাদা করে ওই ধরনের কমিটি তৈরির প্রয়োজনীয়তা নেই।

জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত হাজার পাঁচেক টিকিট প্রত্যাশীর নাম জমা পড়েছে মুরলীধর সেন লেনের অফিসে রাখা ড্রপ বক্সে। মাঝে মাঝে সেইসব আবেদন বান্ডিল করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হেস্টিংসের অফিসে। একেকটি কেন্দ্রের জন্য ২০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত আবেদন করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, সম্প্রতি তৃণমূলের (Trinamool) এক হেভিওয়েট নেতা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁর পুরনো দল এবং কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ককে বিজেপিতে টানার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁদের টিকিট পাইয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যোগদান পর্বের আগের রাতে সম্ভাব্য দলবদলুরা বুঝতে পারেন, পদ্ম শিবিরে টিকিট নিশ্চিত নয়। তারপর গভীর রাতেই গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন তাঁরা। ফলে এ যাত্রায় তাঁদের দলবদল করা হল না।

এদিকে, বিজেপির (BJP) টিকিট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। আগামীদিনে এ বিষয়ে দল আরও বিড়ম্বনায় পড়বে বলে মনে করছেন একাধিক নেতা। তাই সামগ্রিকভাবে এই অস্বস্তি এড়াতে ভোটের রাশ নিজের হাতেই রেখেছেন অমিত শাহ। জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে দলের রাজ্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের (সংগঠন) মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সে সব হবে না। অমিত শাহের (Amit shah) নিজস্ব সমীক্ষক দলের বিশ্লেষণে যাঁদের নাম উঠে আসবে, তাঁরাই পাবেন বিজেপির টিকিট। স্পর্শকাতর বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে টিকিট বণ্টনের কাঁটা এড়াতে ‘অমিত সুধা’ কতটা কাজ দেয়, এখন তাই দেখার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #West Bengal Election 2021

আরো দেখুন