গ্রাম দত্তক নিয়েও উন্নয়ন করেননি বিজেপি সাংসদ, ক্ষোভ বালুরঘাটে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনার গুলিতে মারা গিয়েছিলেন চূড়কা মুর্মু। তিনি ছিলেন বালুরঘাট সংলগ্ন চকরাম প্রসাদ গ্রামের(Chakram Prasad Village) বাসিন্দা। শহিদকে সম্মান জানাতে বছর দু’য়েক আগে ওই গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ বিজেপির সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar)। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গ্রামটির সার্বিক উন্নয়ন করবেন। কিন্তু আজও সাংসদের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও হাতগুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চকরাম গ্রামের রাস্তা, জল , পরিকাঠামো সহ উন্নয়নমূলক অনেক কাজই হয়েছে।
বহুদিন ধরে গ্রামে রাস্তাঘাট, পানীয় জল ও আলোর সমস্যা রয়েছে ওই গ্রামে। লোকসভা নির্বাচনে জিতে সুকান্তবাবু এই গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। কিন্তু দু’বছর কাটতে চললেও উন্নয়নে তিনি কোনও পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। তবে গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য বিজেপি সাংসদের না করা কাজগুলি করছে রাজ্য সরকার। রবিবার বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে শহিদ চূড়কা মুর্মুর বাড়ির রাস্তার কাজের সূচনা হয়। এছাড়াও জল ধরো, জল ভরো প্রকল্প সহ শহিদবেদী সংস্কার ও ফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চকরাম প্রসাদ গ্রাম। এই গ্রামের যুবক চূড়কা মুর্মুকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট চকরাম প্রসাদ গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে তিনি শহিদ হন। পরবর্তীতে তাঁর স্মরণে একটি স্মারক তৈরি করা হয়। গত লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি সাংসদ গ্রামটি দত্তক নেন। সেখানে সোলার লাইট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
গ্রামের এক বাসিন্দা পরিমল দেবনাথ বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক নেতাই এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু সেসব বাস্তবায়ন হয় না। গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। রাস্তাঘাট, আলো সহ বহু সমস্যা রয়েছে। তবে রাজ্য সরকার পানীয় জলের কাজ করছে। এছাড়াও রাস্তা তৈরি হচ্ছে। শহিদের ভাইপো পরেশ মুর্মু বলেন, ২০১৭ সালে বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সেসময় তিনি নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি কাজও হয়নি। এছাড়াও বর্তমান সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও অনেক কাজ করার কথা বলেছিলেন। সেসবের কিছুই হয়নি। তবে রাজ্য সরকার উন্নয়ন কাজ করছে।
তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, সাংসদ চূড়কা মুর্মুর গ্রামে উন্নয়নের জন্য যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার একটিও পূরণ হয়নি। কিন্তু আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমাদের কাছে এরকম কোনও ব্যাপার নেই যে, সাংসদের দত্তক নেওয়া গ্রামে উন্নয়ন করা যাবে না। এদিন রাস্তার কাজের সূচনা হয়েছে। আগামীতে সেখানে যা যা উন্নয়ন করা দরকার আমরা করব। বিজেপিই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। সেই দলেরই সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। ফলে তাঁর কাছ থেকে আর কী প্রত্যাশা করা যায়।
যদিও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আমি ওই গ্রাম সহ গোটা জেলায় সোলার লাইট বসানোর জন্য দেড় বছর আগেই প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এতদিনেও ইচ্ছে করে সেগুলির ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়নি। এখন ভোটের সময় কিছু কিছু কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দিচ্ছে। কিন্তু এখন কীভাবে সেগুলি হবে। তৃণমূল সরকার ইচ্ছা করেই বাধা দিয়ে আমাদের কাজ আটকে রেখেছে, যাতে আমরা উন্নয়ন করতে না পারি। মানুষ এই বিষয়গুলি জানে এবং বোঝে। রাস্তা তৈরি করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। তবে ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেলে সোলার লাইট বসাব। এছাড়াও ওই গ্রামের স্কুলে নিজস্ব উদ্যোগে কম্পিউটার দেব।
প্রসঙ্গত, চকরাম গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি এখনও বেহাল। এছাড়াও চূড়কা মুর্মুর বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটিও এতদিন কাঁচা ছিল। এবার রাস্তাটি পাকা করা হচ্ছে। রবিবার ওই রাস্তার কাজের সূচনা করেন বালুরঘাটের বিডিও অনুজ শিকদার, ম্যাকিনটস বার্নের চেয়ারম্যান শঙ্কর চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা।
এবিষয়ে বিডিও বলেন, এদিন ভাটপাড়ার চকরাম এবং চিঙ্গিসপুর গ্রামে দু’টি রাস্তার কাজের সূচনা হয়েছে। পাশাপাশি চূড়কা মুর্মুর শহিদবেদী দীর্ঘদিন ধরে একইরকম রয়েছে। সেখানে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে সংস্কার ও ফলক বসানোর নির্দেশ দিয়েছি।