বেসরকারি হাসপাতালে ২৫০ টাকায় মিলবে করোনা টিকা
বেসরকারি হাসপাতালে(Private Hospital) সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় মিলবে ভ্যাকসিনের(Vaccine) এক-একটি ডোজ। শনিবার কেন্দ্রীয় সরকার এক বিবৃতি জারি করে এই উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিল। যদিও এর মধ্যে পূর্বঘোষিত ১০০ টাকার সার্ভিস চার্জ যুক্ত হবে, নাকি ২৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে সেই সার্ভিস চার্জ—তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী(Dr Ajay Chakraborty) অবশ্য জানান, নির্দেশ দেখে মনে হচ্ছে, সবমিলিয়ে ২৫০ টাকাই লাগবে।
এদিকে ৪৫-৫৯ বছর বয়সে টিকা পেতে ২০ ধরনের অসুখকে কোমরবিডিটির(Comorbidity) তালিকায় রাখা হল। এগুলির যে কোনও একটি থাকলে তবেই ওই বয়সের মানুষ টিকা পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মেনে রাজ্য এই ২০টি অসুখের তালিকাসহ ফর্ম প্রস্তুত করে চিকিৎসক সংগঠনগুলির মাধ্যমে ডাক্তারবাবুদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও শুরু করেছে। ডাক্তারবাবুরা যদিও মনে করেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ২০টির যে কোনও একটি রোগে ভুগছেন, সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন। তখনই সেই ব্যক্তি ভ্যাকসিন পাবেন। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অসুখ হল—প্রেশার, সুগার (১০ বছরের বেশি), করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা (গত দু’বছরের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হলে), স্টেন্টি, বাইপাস, হার্ট ফেলিওর (এক বছরের মধ্যে), হার্ট প্রতিস্থাপন, ভালভের অসুখ, অন্তিম পর্যায়ের কিডনির অসুখ, লিম্ফোমা, লিউকোমিয়া ইত্যাদি।
সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও টিকা নেওয়ার জন্য সারা দেশে আয়ুষ্মান ভারত ও সিজিএইচএস প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১০,৬৮৭ হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ করল কেন্দ্র। বাংলাও জোরকদমে মার্চ থেকে টিকাকরণ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, দিনে ১১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০০ পর্যন্ত টিকাকরণ কেন্দ্র খোলা হবে মার্চে। গড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। সরকারি কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত ১৫০০ হাসপাতালে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে টিকাকরণের অনুমতি দেওয়া হবে। এবিষয়ে এদিন স্বাস্থ্যভবন ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে মহারাষ্ট্র, কেরল, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু ও কাশ্মীর—আট রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি উর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি বিচার করে রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের জরুরি বৈঠক করেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। বিন্দুমাত্র শৈথিল্য না দেখিয়ে করোনা বিধি মানায় আরও কড়াকড়ি করতে বলেছেন তিনি। করোনা নিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও। রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা জানালেন, ২৭ জানুয়ারি রাজ্যগুলিকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিধিনিষেধের যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, তা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হল। যদিও অন্তঃরাজ্য বা আন্তঃরাজ্য গাড়ি চলাচল, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত গাড়ি চলাচল বজায় থাকবে। প্রয়োজনে নতুন করে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা বা বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের উপর নির্ভর করছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র, কেরল, পঞ্জাব, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও গুজরাতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশে নতুন করে আক্রান্ত ১৬ হাজার ৪৮৮ জনের প্রায় ৮৬ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন এই ছ’টি রাজ্য থেকে। মহারাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দৈনিক সর্বাধিক ৮৩৩৩ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানকার অমরাবতীতে আরও এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। কেরলে ৩৬৭১ ও পঞ্জাবে ৬৬২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও গ্রাফ যে ধীরে ধীরে উর্ধ্বমুখী, পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে। ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্ত ছিলেন যথাক্রমে ১৪৮, ১৮৯, ২০২, ১৯৯ এবং ২১৬। করোনা হাসপাতালে ভর্তি শয্যার হার ২.৪৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.৩১ শতাংশ। এদিকে টিকাকরণে দেশের প্রথম তিন রাজ্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাংলা। ৯৭ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী-চিকিৎসককে এবং প্রায় অর্ধেক প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাকেই টিকা দেওয়া হয়েছে।