জোট ঘোষণার পরও আব্বাসদের নিয়ে আসন জট অব্যাহত, বৈঠকে অনুপস্থিত মান্নান
রবিবার ভিড়ে ঠাসা ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী মহাজোটের নতুন নাম ঘোষণা করেছেন বাম, কংগ্রেস এবং নয়া সহযোগী আব্বাস সিদ্দিকির (Abbas Siddiqui) দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘটা করে ‘সংযুক্ত মোর্চা’ নাম দিয়েছে তারা। কিন্তু সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরও আসন ভাগাভাগির জট কাটার স্পষ্ট লক্ষণ দেখা গেল না। সোমবার এই মহাজোটের অন্যতম দুই পক্ষ সিপিএম এবং কংগ্রেসের (Congress) বড় কর্তারা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করে আসন নিয়ে নিজেদের মধ্যে ৯০ শতাংশ বোঝাপড়া চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
যদিও প্রথম দফার ভোট হবে এমন কয়েকটি কেন্দ্র নিয়েই বাম-কংগ্রেসের মধ্যে রফা হয়নি এদিন পর্যন্ত। একই ভাবে আইএসএফ এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে নতুন করে কোনও আলোচনার উদ্যোগও এদিন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে এবারের বিধানসভা ভোটের (West Bengal Election 2021) মনোনয়নপর্ব আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হলেও, সংযুক্ত মোর্চার অন্দরের সমস্যা যথারীতি জিইয়ে রয়েছে। যার ফলে আজ কোনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারছেন না মোর্চার কোনও শরিকই। আজ বামফ্রন্টের বৈঠকের পর ছবিটা পরিস্কার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের উদ্দেশে আব্বাসের খুল্লামখুল্লা হুঁশিয়ারিকে ঘিরে যে নতুন তিক্ততার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতেও এখন ব্যস্ত বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব। ড্যামেজ কন্ট্রোলে এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং বিমান বসু-অধীর চৌধুরীরা। নাম না করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা, ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে না করলেই ভালো করতেন আব্বাস—এমনটা মনে করেন বিমানবাবুরাও। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ওই ধরনের বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আর যাতে না বলা হয়, সেটা বুঝতে হবে আব্বাসদের। আশা করব, এই ভুল বোঝাবুঝি অচিরেই কেটে যাবে। মূলত যাঁকে ঘিরে আব্বাসের ক্ষোভ সেই প্রদেশ কং সভাপতি বলেন, মঞ্চে কোনও দলের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় নেতারা প্রথমে এলে তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে একটা উচ্ছাস-উন্মাদনা তৈরি হয়। আমার ভাষণের সময় আব্বাস মঞ্চে ওঠায় সেটাই হয়েছিল। আমি সাময়িকভাবে তাই বক্তৃতা থামিয়ে দিয়েছিলাম। আমি মোটেও তাতে ক্রুদ্ধ হইনি। এটা মিডিয়ার ব্যাখ্যা মাত্র। আব্বাসও অবশ্য চান না এনিয়ে তিক্ততা আরও বাড়ুক। এই কারণে তিনি এদিন বলেন, তাঁর ব্রিগেডের বক্তব্যের জন্য কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি দুঃখিত। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তবে বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ বৃহত্তর ঐক্যের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় মোর্চার সব পক্ষকেই পরস্পরের জন্য স্বার্থত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, কংগ্রেসের এক নেতা আমায় জানিয়েছেন, ভোটের পর তাঁদের দল মমতাকে সমর্থন করতে পারে। এমনকী, কিছু বিধায়ক বিজেপি’র দিকেও ঝুঁকতে পারেন অবস্থা বুঝে। এই বিষয়গুলি আমাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার।
এই আকচা-আকচির মধ্যে এদিন বিধান ভবনে সিপিএম (CPM)-কংগ্রেসের ম্যারাথন আলোচনার পর বিমান-অধীররা যা জানিয়েছেন, তাতে কংগ্রেসকে ৯২টি আসন দেওয়া নিশ্চিত হয়েছে। আরও আসনের দাবি থেকে আপাতত কংগ্রেস সরে এসেছে। এদিন বেশ রাতের খবর, আজ মঙ্গলবার আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস এবং আইএসএফের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। সিপিএমও উপস্থিত থাকবে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। তবে অধীর চৌধুরী ওই বৈঠকে থাকবেন না বলে খবর। আব্দুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্যদের থাকার কথা। তবে মান্নান অবশ্য কলকাতায় থাকলেও সোমবারের বৈঠকে ছিলেন না।