কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভায় শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে বিজেপি
কাঁথি (Kanthi) দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র অধিকারী পরিবারের কাছে ‘হোম গ্রাউন্ড’। গলি থেকে রাজপথ, এমনকী ইলেক্ট্রিক পোস্টগুলিও তাদের চেনা। কিন্তু, নতুন টিমে নাম লেখানোর পর সেই চেনা মাঠ কেমন আচরণ করবে, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের বাজারে বিজেপি কস্মিনকালেও এই এলাকায় সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। অধিকারী পরিবারের দুই সদস্য দল বদল করায় তৃণমূলের (Tronamool) শক্ত ঘাঁটিতে কতটা আঁচড় কাটবে, তানিয়ে শহরবাসীর মধ্যেই সংশয় আছে। কারণ, সাধারণ ভোটাররা এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দেখেই ভোট দিয়ে এসেছে। এবারও তাঁরা প্রমাণ করতে চাইছেন, দু’-চারজন নেতার দল বদলে সাধারণ কর্মীদের উপর তেমন প্রভাব পড়েনি। কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সেটাই উঠে এসেছে।
কাঁথি শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে চা-সিগারেটের দোকান চিত্তরঞ্জন পণ্ডার। বাড়ি কাঁথি-১ ব্লকের দুলালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কচুয়া গ্রামে। ৬২ বছর বয়সি চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, আগে কংগ্রেস করতাম। তারপর ’৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করছি। ব্যক্তিগত স্বার্থে এখানকার কেউ কেউ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের মতো সাধারণ কর্মীরা সেই তৃণমূলেই। এই দোকানে রোজগার করেই সংসার চালিয়েছি। সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছি। বড় মেয়ে পিএইচডি করছে। ছোট মেয়ে স্নাতকে পার্ট-থ্রি পরীক্ষা দেবে। অন্যের উপর কখনও ভরসা করিনি। একজন বয়স্ক ব্রাহ্মণ হয়ে বলছি, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বিধানসভা ভোটে তা প্রমাণ হয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
কাঁথি শহরে টোটো চালান পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দারুয়ার ২২ বছরের যুবক নাদিম রাজা। বৃহস্পতিবার নাদিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সাধারণ মানুষের জন্য একের পর এক স্কিম করেছেন, তাতে তৃণমূলের উপর থেকে আস্থা হারানোর কিছু নেই। বরং কেন্দ্রীয় সরকার রান্নার গ্যাস থেকে পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়িয়েই চলছে। তাতে সাধারণ মানুষজনের হাঁসফাঁস অবস্থা। দু’-চারজন নেতা এদিক ওদিক করলেও আমাদের মতো নিচুতলায় কোনও সমস্যা নেই। মহিষাগোট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হরিপুর গ্রামের সাধারণ চাষি দয়ালহরি পয়ড়া বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূলকে মানুষ ভোট দেয়। তিনিই মুখ্য চরিত্র, অন্য কেউ নয়।
কাঁথি-১ ব্লকের আটটি পঞ্চায়েত, কাঁথি পুরসভা এবং কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠ ও কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই অধিকারী পরিবারের তিন সদস্য পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই কেন্দ্রটিকে অধিকারী পরিবারের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ধরা হয়। এবার কাঁথি দক্ষিণ আসনে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় চারদিকে জোড়াফুলের সমর্থনে প্রচুর দেওয়াল লিখন হয়ে গিয়েছে। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ শীর্ষক বড় বড় হোর্ডিং কাঁথি শহরে বিভিন্ন প্রবেশ পথে টাঙানো হয়েছে।
পুরবোর্ডের প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি বলেন, নেতাদের মধ্যে দু’-চারজন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেছেন। কিন্তু, সাধারণ কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই তৃণমূল করেন। অন্য কাউকে দেখে নয়। কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েন বলেন, কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভার মানুষ বেইমানির বদলা নেবেন। এই বিধানসভা কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। ২ মে এটা প্রমাণ হয়ে যাবে।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, এই সাংগঠনিক জেলার অধীনে মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র আছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে আমরা জিতব এবং গড় মার্জিন ২৫ হাজারের ঊর্ধ্বে থাকবে।