একশো দিনে পড়ল কৃষক আন্দোলন
জান যায় যাক, তবুও…তিন কৃষি আইন বাতিল করতেই হবে”, এই মন্ত্রেই বিশ্বাসী হয়ে ১০০ তম দিনে পড়ল রাজধানীতে চলা কৃষক আন্দোলন (Farmers Protest)। সপ্তাহ দুয়েক আগে সংযুক্ত কিষাণ মঞ্চের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে আন্দোলনরত ২৪৮ কৃষকের। কিন্তু ওই যে ‘জান কবুল…’
১০০ তম দিনে চলছে আন্দোলন, তবুও সাফল্য এখনও আসেনি। রাস্তায় আন্দোলনরত, ধর্না দেওয়া অন্নদাতাদের আর্তনাদ এখনও গলাতে পারেনি সরকারের মন। এর মধ্যে অবশ্য আন্দোলন ভাঙতে চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। কখনও বলপূর্বক, আবার কখনও মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখানোর অভিযোগও তুলেছেন কৃষকেরা। তবুও রাজধানী ঘিরে অনড়, দৃঢ় সংকল্পিত কৃষকেরা।
তাঁদের অভিযোগ, আন্দোলনকে বদনাম করার চেষ্টাও হয়েছে! ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমাও জুটেছে কপালে। কিন্তু যত বাধা এসেছে ততই যেন ধীর, স্থির আরও বেশি সংকল্পিত হয়েছেন কৃষকেরা। যত তাঁদের আটকানোর চেষ্টা হয়েছে, তত যেন ট্র্যাকটর চালানো হাত আকাশের দিকে মাথা তুলে অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছে। কোনও ভাবে বন্ধ করা যায়নি কৃষক আন্দোলন।
শুধুই যে ক্ষমতাসীন সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই তা নয়। দীর্ঘ ১০০ দিন রাস্তায়, ট্র্যাকটরের খোঁদলে থাকা অন্নদাতাদের লড়তে হয়েছে দিল্লির চরম প্রকৃতির সঙ্গেও। হাড় কাঁপানো ৫ ডিগ্রি ঠাণ্ডা গিয়েছে। শীতের মধ্যেই সহ্য করতে হয়েছে বৃষ্টিও। তখন মাথার ওপর আচ্ছাদন বলতে খোলা আকাশের নীচে একটুকরো ত্রিপল। বৃষ্টি কাটার পর এবার আসছে গরম। যখন তাপমাত্রা ছুঁয়ে ফেলবে ৪৭ এর পারা, গলে যেতে শুরু করবে রাস্তার কালো পিচ, আর তখনও ভয়ঙ্কর রোদ মাথায় নিয়ে সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজেদের অধিকারের দাবি জানাবে কৃষকেরা।
গাজিপুর (Gazipur) সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকেরা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, তাঁদের এ আন্দোলনে একমাত্র দাবি কৃষি আইন বাতিল। কোনও সংশোধন বা অন্য কোনও রাস্তাতেই তাঁরা এক্ষেত্রে হাঁটতে রাজি না। তাঁরা চাইছেন না কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়াতে আসতেও, তাঁরা লড়বেন একারাই, ‘একে এক দুই’ হয়ে লড়বেন তাঁরা।
অবশ্য ইতিমধ্যেই দেশের বহু রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে প্রচুর সাধারণ মানুষ, সেলেবরাও কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। বিদেশ থেকেও এসেছে সমর্থনের বার্তা, এমনকি সুদূর হলিউড থেকেও ‘বন্ধু’ পেয়েছে কৃষকেরা। কিন্তু এখনও মন টলেনি সরকারের। আর তাই নিজেদের অবস্থানেও অনড় কৃষকেরা। লড়াইটা জারি রেখেছে তাঁরা, তাঁদের মতো করেই।