দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

জমি আন্দোলনের বিরোধীরাই নন্দীগ্রামে বিজেপির সাথে

March 9, 2021 | 2 min read

জমি আন্দোলনের বিরোধীরাই এখন নন্দীগ্রামের(Nandigram) ভোটে বিজেপির মুখ হয়ে উঠছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) মোকাবিলা করতে গিয়ে দিশেহারা বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব কোথাও কোথাও আবার ‘হার্মাদ নেতাদের’ সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছে। বিজেপির এই ভূমিকায় জমি আন্দোলনকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৭সালে জনরোষে মারা গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা শঙ্কর সামন্ত। তাঁর ভাই নবকুমার সামন্ত স্থানীয় বিজেপি প্রার্থীর মিটিং-মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভোটের দায়িত্বও তাঁরই কাঁধে। নবকুমারবাবুর বিরুদ্ধে খুন সহ একগুচ্ছ মামলা ঝুলছে। ২০১১সাল থেকে ২০১৪সাল পর্যন্ত জেলও খেটেছেন। নন্দীগ্রামের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে এখন তিনি পরিবার নিয়ে হলদিয়ার দুর্গাচকে থাকেন।


শুধু নবকুমার নয়, তাঁর সঙ্গীরা আগেই বিজেপিতে ঢুকেছেন। পদও পেয়েছেন। নন্দীগ্রামবাসীর অভিযোগ, জমি আন্দোলনের সময় যাঁরা অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন, তাঁরাই বিজেপির প্রচারের মুখ হয়ে উঠছেন। সোনাচূড়ার আশিস মণ্ডল বিজেপির নন্দীগ্রাম-১ দক্ষিণ মণ্ডলের এসসি মোর্চার সভাপতি। এক সময় সিপিএমের অ্যাকশন স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা ঝুলছে। জেলও খেটেছেন। নবকুমারের আর এক সঙ্গী দীপন মণ্ডল বিজেপির মণ্ডল কমিটির সদস্য। তিনিও সিপিএমের দাপুটে নেতা ছিলেন। একাধিক মামলায় অভিযুক্ত। মদন পাইক বিজেপির সোনাচূড়ার ২৭৭নম্বর শহিদ মিনার বুথের সভাপতি। এছাড়াও জহর পাত্র, শ্রীহরি মণ্ডল, বলাই পাত্র, রবিন মণ্ডল প্রত্যেকেই বিজেপির বুথ সভাপতি। আন্দোলনকারীদের উপর অত্যাচারে চালানোর জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ মামলা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ঠেকাতে বিজেপি জমি আন্দোলনের বিরোধীদের হাত ধরায় ক্ষোভে ফুঁসছে নন্দীগ্রাম।

দিনকয়েক আগে সোনাচূড়ায় বিজেপির একটি সভা হয়। সেখানে শঙ্করবাবুর ভাই নবকুমার হাজির ছিলেন। তাঁকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। নবকুমার বলেন, আমার দাদা সিপিএম পরিচালিত নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। দাদার কিংবা আমার পার্টির সদস্যপদ ছিল না। সিপিএম পার্টি আমাদের ব্যবহার করেছে। আমরা সিপিএম করি বলে মিডিয়া প্রচার করে দিয়েছিল। তার পরিণাম হিসেবে চার প্রজন্মের ভিটেমাটি খুইয়ে আমাদের সর্বহারা হতে হয়েছে। এখন কোনওরকমে বেঁচে রয়েছি। ১৫-১৬টি মামলা ঝুলছে। চার বছর জেল খেটেছি। বিজেপির প্রতি ঝোঁক রয়েছে। নন্দীগ্রামের প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে চাই। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস বলেন, শঙ্কর সামন্ত এবং নবকুমার সামন্তের পার্টির সদস্যপদ ছিল। নবকুমার বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় এখন পার্টির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।


জমি আন্দোলন পর্বে ১২টি মামলায় অভিযুক্ত সোনাচূড়ার আশিস মণ্ডল। তিনি সিপিএমের একটা হার্মাদ বাহিনীর নেতা। এখন সেসব অতীত। তিনি এখন বিজেপির অন্যতম কার্যকর্তা। মণ্ডল কমিটির এসসি মোর্চার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অজস্র মিথ্যা মামলা হয়েছে। অনেকেই জেল খেটেছেন। কেউ কেউ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। তৃণমূলের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আমরা বিজেপির পতাকা তুলে নিয়েছি। এখানে তৃণমূল ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে। নন্দীগ্রামবাসীর বক্তব্য, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের কৃতিত্ব যেসব বিজেপি নেতারা নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের জানা উচিত, কারা সেই সময় আন্দোলনকারীদের উপর অত্যচার চালিয়েছিল। কারা খুনের অভিযোগে জেল খেটেছিল। সেই সব জেলখাটা সিপিএম হার্মাদকে বিজেপি দলে নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের অপমান করছে।


বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, রাজনীতিতে সবই সম্ভব। তৃণমূল কর্মী খুনে বহু অভিযুক্ত শাসক দলের নানা পদে রয়েছেন। পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা দলে এসেছেন, তাঁদের আমরা গ্রহণ করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলেকশন এজেন্ট শেখ সুপিয়ান বলেন, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের বিরোধী ও খুনিদের নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে। বিশ্বাসঘাতকতার জবাব নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা দেবেন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nandigram, #land protest, #bjp, #tmc

আরো দেখুন