সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে শঙ্কর, তীব্র অসন্তোষ আদি গেরুয়া শিবিরে
সিপিএম ছেড়ে অবশেষে বিজেপিতেই যোগ দিলেন অশোক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ নেতা শঙ্কর ঘোষ (SHankar Ghosh)। শুক্রবার শিলিগুড়িতে একটি হোটেলে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নেন তিনি। বিধানসভা ভোটে টিকিট পাওয়ার ‘প্রত্যাশায়’ তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন বলে তোপ দেগেছেন স্থানীয় বাম নেতৃত্বের অনেকেই। এদিন শঙ্করের পাশাপাশি বিমল গুরুংপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কালচিনির চার নেতা বিশাল লামা, নবীন ছেত্রী, নীরজ রাই ও দেওকুমার রাইও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এদিকে, শঙ্কর ঘোষের যোগদান ঘিরে আদি বিজেপির অন্দরে চাপা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় শঙ্করের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে।
নতুন দলে যোগ দিয়ে এদিনও শঙ্কর নাম না করে শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করেন। একদা নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’কে নিশানা করে তিনি বলেন, একজনের কথামতোই সবটা চলছে। ওখানে মানুষের জন্য কাজ করতে পারছিলাম না। যদিও সদ্য দলত্যাগী সতীর্থর এই আক্রমণ নিয়ে অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে কোনও কথা বলাই উচিত নয়। ওঁর মনোভাব আমাদের আগেই বোঝা উচিত ছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি। ওঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাই ওই চ্যাপ্টার ক্লোজড। আর কোনও কথা বলব না। এদিকে, শিলিগুড়ির এই ডাকাবুকো সিপিএম নেতা দলে আসায় বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই হতাশ। যদিও দলীয় শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে প্রকাশ্যে তাঁরা কেউ কিছু বলতে চাননি। তবে এদিন এই যোগদান কর্মসূচিতে উপস্থিত গুটিকয়েক নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে আলোচনায় একটি প্রশ্নই শোনা গিয়েছে, কিছুদিন আগেও যে শঙ্কর ঘোষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং নয়া কৃষি আইন নিয়ে সমালোচনায় জর্জরিত করেছেন, তাঁকে নিয়ে ভোট প্রচারে গেলে মানুষের কাছে কী কৈফিয়ৎ দেব? শঙ্কর প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির আদি নেতা-কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, এতে দলের অন্দরে নতুন করে অশান্তি তৈরি হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, শঙ্কর ঘোষের রাজনৈতিক পরিচয় অশোক ভট্টাচার্যের ছায়াসঙ্গী হিসেবে। শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলার, নির্বাচিত মেয়র পরিষদ সদস্য হলেও রাজনীতিতে তাঁর উল্লেখ করার মতো কোনও কাজ নেই। পুরসভা নির্বাচনে মাত্র ৬৪ ভোটে জিতেছিলেন। কাজেই সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাঁকে দলে নিয়ে আদৌ কতটা লাভ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপির (BJP) যুব নেতৃত্বের মধ্যেও শঙ্কর ঘোষকে ভোটের মুখে এ ধরনের গুরুত্ব দেওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরাও শঙ্করকে খোলা মনে মেনে নিতে পারছেন না। এদিন বিজেপির যুব কর্মীদের আলোচনায় শোনা গিয়েছে, বাম কর্মী হিসেবে তাঁর বিজেপি বিরোধী কার্যকলাপ সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সতেজ। তাই ভোটের মুখে তাঁকে দলে নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক যুব নেতা বলেন, শুনেছি ওঁকে ভোটে টিকিটও দেওয়া হবে। সেটা হলে দলের দীর্ঘদিনের নেতা-কর্মীদের প্রতি অবিচার করা হবে। তা দলের অনেকেই ভালোভাবে মেনে নেবেন না। অসন্তোষ চরম আকার নেবে। এতে দলের ভাঙনও দেখা দিতে পারে।
এদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেও বামপন্থী নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে শঙ্কর ঘোষের অতীতের বিভিন্ন পোস্ট উল্লেখ করে তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন অনেকেই। যদিও সেসবে পাত্তা দিতে নারাজ শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, আমি পুরোপুরি নতুন পরিবেশে এলাম। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সেই সুযোগ দিলে আমি জনগণের জন্য কাজ করব। তবে নতুন পরিবেশ ভুলভ্রান্তি হলে আমাকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়।