ক্ষতবিক্ষত হয়েও ঘুরে দাঁড়াল জেএনইউ

ঠিক তিন দিন আগে, রবিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে ভয়াবহ হামলার পর এমনই হিমেল আতঙ্কের স্রোত বয়ে গিয়েছিল ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের মধ্যে।

January 8, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যেঃ ThePrint

সন্ধের অন্ধকার নেমে এসেছে সবরমতী টি পয়েন্টে। রাস্তার আলোগুলো বেশিরভাগই জ্বলছে না। হাড়ে কাঁপুনি ধরা ঠান্ডা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে দু’পাশের জঙ্গল থেকে ছুটে আসা শনশনে হাওয়া। ঠিক তিন দিন আগে, রবিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে ভয়াবহ হামলার পর এমনই হিমেল আতঙ্কের স্রোত বয়ে গিয়েছিল ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের মধ্যে। 

সোমবার ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হলেও চির প্রতিবাদী জেএনইউয়ে সেই সভায় লোক হয়নি। ভয়ে হস্টেল ছাড়তে শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পর সেই ছবিটাই পাল্টে গেল মঙ্গলবার। রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হয়েও পাল্টা ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস দেখাল জেএনইউ। ফিরে এল ঐতিহ্যশালী ক্যাম্পাসের লড়াকু স্পিরিট। নেপথ্যে প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়া ও শিক্ষকরাই।

এ দিন দুপুর থেকেই দুর্গের মতো হয়ে গিয়েছিল জেএনইউ। ক্যাম্পাসে ঢোকার দু’দিকের রাস্তাই ছয়লাপ ছিল পুলিশে। বন্ধ করে দেওয়া হয় বসন্ত বিহারের দিকের রাস্তা। ঢোকা যায়নি বাবা গঙ্গানাথ মার্গের রাস্তা দিয়েও। যে দিল্লি পুলিশ সে দিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের মার খেতে দেখেছে, এ দিন তারাই ছিল মিডিয়া ও প্রাক্তনীদের মিছিলকে আটকাতে অতিসক্রিয়।

রবিবার রাতে হামলার সন্ধ্যায় তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল গোটা ক্যাম্পাসে। সুচারু পরিকল্পনায় করা সেই হামলার পর থেকেই থতমত খেয়ে যান ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই। ক্যাম্পাস জুড়ে অ্যাসিড হামলার ভয়, গুজব ছড়িয়েছে আগুনের গতিতে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে সেই বিকল হতে বসা আত্মাটাই পুনরুদ্ধার করলেন সকলে মিলে। দল বা সংগঠনের ব্যানার সরিয়ে, যৌথ কণ্ঠে সেই সোচ্চার ঘোষণার রং ছিল তেরঙা।

সেদিন হামলার খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে এসে মার খেতে হয়েছিল যোগেন্দ্র যাদবকে। এ দিন তিনি বললেন, ‘আমি ছোট শহর থেকে এখানে পড়তে এসেছিলাম ১৯৮১-’৮৩ সালে। কোনওদিন বলতাম না আমি জেএনইউয়ের প্রাক্তনী। কারণ এখানকার অক্সফোর্ড কেমব্রিজ ক্লাবের বাইরেই আমি থেকে গেছি। কিন্তু আজ আমি একজন গর্বিত প্রাক্তনী। সেদিন দেখেছি ছাত্রদের রক্ষার জন্য গভীর রাতে শিক্ষকরা গেটে দাঁড়িয়ে। কিন্তু সে দিন ওই গুন্ডাদের সঙ্গে একজন শিক্ষকও ছিলেন।’ যোগেন্দ্র মনে করিয়ে দিলেন, এটা রাইট বনাম লেফটদের লড়াই বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু লড়াইটা আসলে রাইট বনাম রংয়ের।

সভা চলাকালীন একেবারে পিছন দিকে দাঁড়িয়ে তেরঙ্গা পতাকা ক্রমাগত নাড়িয়ে গেলেন এক যুবক। ছেলেটির নাম বাসিত। এখানে সোশ্যাল মেডিসিন পড়েন। বাসিত স্পষ্ট জানালেন, ‘জেএনইউয়ে এখন আর আলাদা কোনও রং নেই।’ সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন এইমসের চিকিৎসক শাহ আলম খান। তিনি বললেন, ‘ফ্যাসিজমের দুটো স্তম্ভ, লোভ আর মূর্খামি। সুশীলা কুমারী বলে ঝাড়খণ্ডের একটি শিশুর আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিঙ্ক ছিল না। একমুঠো ভাতের জন্য সে মারা যায়। এই প্রশ্ন জেএনইউ তোলে। তাই এখানে এত হামলা।’

কাশ্মীরের রাজৌরির ছেলে বিকাশ শর্মা সে দিন হামলার সময় বাইরে ছিলেন। রাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই তাঁকে মারা হয়। এখনও শরীরে কালসিটে দাগ। বিকাশ বললেন, ‘আজ কিন্তু লোকে ভয়ের খোলসটা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।’

প্রবীণ অধ্যাপক অভিজিৎ পাঠক বলেন, ‘এটাই তো আমাদের ক্যাম্পাসের স্পিরিট। ছাত্র শিক্ষকরা মিলে আজ সেই লড়াইটাই করছেন।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন