প্রার্থী পরিবর্তন করেও মিটছে না ক্ষোভ, আলিপুরদুয়ারে বিড়ম্বনায় বিজেপি
বিজেপি আলিপুরদুয়ার বিধানসভা আসনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ির বদলে সুমন কাঞ্জিলালকে প্রার্থী করতেই গেরুয়া শিবিরে আদি ও নব্য দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, মাত্র একবছর আগে দলে এসেই সুমনবাবু কীভাবে প্রার্থী হন। সুমনবাবুকে প্রার্থী করার প্রতিবাদে জেলায় বিজেপির পুরনো নেতা হিসেবে পরিচিত হেমন্ত রায় আলিপুরদুয়ার আসনে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, হেমন্তবাবুর এই সিদ্ধান্তে আলিপুরদুয়ারে বেকায়দায় পড়তে পারে বিজেপি। যদিও জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দলে আদি-নব্য বলে কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রবীণ হেমন্তবাবু ১৯৮০ সাল থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত। আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) বিধানসভা আসনের শালকুমারের বাসিন্দা হলেও দলের দুর্দিনে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি ফালাকাটা আসনে দলের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। এর আগে তিনি দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। কিন্তু নব্যদের ভিড়ে হেমন্তবাবুর মতো বিজেপির পুরনো নেতাদের অনেকেই এখন কোণঠাসা। তাই হেমন্তবাবুকে সামনে রেখে বিজেপির আদি নেতা-কর্মীরা জোট বাঁধছেন।
বিজেপির (BJP) জেলা কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হেমন্তবাবু বলেন, অশোকবাবুকে বাদ দিয়ে আলিপুরদুয়ার আসনে দল যাঁকে প্রার্থী করেছে তিনি দলে নতুন মুখ। তিনি সংগঠন করেননি। তাছাড়া দলের দুর্দিনে সংগঠন করতে গিয়ে আমার মতো পুরনো নেতা-কর্মীরা শাসক দলের কর্মীদের হাতে দিনের পর দিন মার খেয়েছেন। পুলিসের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে। মামলা মোকদ্দমায় জেরবার হতে হয়েছে। সেখানে দলে নতুন আসা কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টের। তাই দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা আমার বাড়িরে ভিড় করছেন। আমাকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য বলছেন। তাই দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের অনুরোধেই আলিপুরদুয়ার বিধানসভা আসনে আমি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্ত বদলের প্রশ্ন নেই।
প্রসঙ্গত, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথমে আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী হিসেবে অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ির নাম ঘোষণা করে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, কে অশোকবাবু? তাঁকে আমি চিনিই না। এরপরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অশোকবাবুর বদলে গঙ্গাপ্রসাদবাবুর ঘনিষ্ঠ দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুমনবাবুর নাম ঘোষণা করে।
তারপরেই সোনাপুর, বাবুরহাট, শালকুমার, তপসিখাতা, ভাটিবাড়ি, চাপড়েরপাড়, চকোয়াখেতি সহ আলিপুরদুয়ার বিধানসভাজুড়ে বিজেপির আদি শিবিরের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদবাবু অবশ্য বলেন, কালচিনির প্রার্থী বিশাল লামা সদ্য দলে এসেছেন। সুমনবাবু দলে নব্য নন। তিনি একবছর আগে দলে যোগ দেন। দলে নব্য-পুরনো বলে কিছু হয় না। হেমন্তবাবু নির্দল হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।
দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি গুনধর দাস বলেন, হেমন্তবাবু আমাদের বহু দিনের পুরনো নেতা। আশা করছি, হেমন্তবাবু তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করবেন। প্রার্থী সুমনবাবু অবশ্য বলেন, দলে নব্য-পুরনো বলে কিছু হয় না। আমার প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।