ভারতে একদিনে করোনা আক্রান্ত ৪০ হাজারের বেশি, উদাসীন কেন্দ্র
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এদিন নতুন করে ৪০ হাজার ৯৫৩ জন কোভিড (Covid 19) পজিটিভ হয়েছেন। গত ১১১ দিনের মধ্যে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্টে যেটি উদ্বেগজনক দিক, সেটি হল গত ১০ দিনের প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেই করোনা সংক্রান্ত সামাজিক বিধি কড়াভাবে মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা। শনিবার সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিবের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কড়া হওয়ার বার্তা দেন তিনি। বলেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি যেভাবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার নিয়ম রয়েছে, তা যেন এই পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে মেনে চলা হয়। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনকেই কড়া হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, লাগাতার পাঁচ মাস ধরে করোনা সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার পর গত দু’তিন সপ্তাহে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। সেকারণেই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার নিদান দিল কেন্দ্র। বস্তুত, দেশের আটটি রাজ্য এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলি হল মহারাষ্ট্র, কেরল, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, কর্ণাটক, হরিয়ানা ও দিল্লি।
এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রের। শনিবারই স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এটা রেকর্ড। কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারের পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী আদিত্য থ্যাকারে। বর্তমানে তিনি হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। গোটা রাজ্যের মধ্যে পুনে, নাগপুর, মুম্বই, থানে এবং নাসিকে সংক্রমণের হাল সবচেয়ে খারাপ বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় সংক্রমণ বাড়ছে ধারাবিতে। মার্চ মাসে ধারাবিতে সংক্রমণের হার ফেব্রুয়ারির থেকে ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, বহুতলে থাকা মানুষের থেকে ধারাবিতে থাকা মানুষের সংক্রমণের হার কম। তবে মার্চে তা একেবারে উল্টে গিয়েছে। মুম্বইয়ের সংক্রমণ রুখতে পুর-প্রশাসন ঠিক করেছে, এবার থেকে জনবহু এলাকায় অনুমতি ছাড়াই র্যান্ডম কোভিড পরীক্ষা করা হবে। মল, রেলস্টেশন, বাজার, সরকারি অফিসের মতো জায়গায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হবে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, যাঁরা কোউইন অ্যাপে নিজের নাম ভ্যাকসিনেশনের জন্য নথিভুক্ত করেছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই। তার আগেই নির্দিষ্ট সেন্টারে গিয়ে তাঁরা প্রতিষেধক নিতে পারেন। এরই মধ্যে অবশ্য সমগ্র মহারাষ্ট্রে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অফলাইন মোডে হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী মাসেই ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এদিন বলেছেন, রাজ্যে কেন এত দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির তদন্ত করা উচিত।
রাজধানী দিল্লিতেও শনিবার আটশোরও বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চলতি বছরে এটাই একদিনে দিল্লিতে আক্রান্তের রেকর্ড। তবে আশার আলো দেখাচ্ছে ১৫টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। অসম, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশা, পুদুচেরি, লাক্ষাদ্বীপ, সিকিম, লাদাখ, মণিপুর, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং অরুণাচল প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একটিও সংক্রমণের খবর মেলেনি।