সিএএ এখন বিজেপির কাছে শাঁখের করাত
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)(CAA) নিয়ে বিজেপির(BJP) সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এখন বেশ বিপাকে। সামনেই অসম(Assam), পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal) সহ চার রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা ভোট। এর মধ্যে অসম ও পশ্চিমবঙ্গে সিএএ অন্যতম বড় ইস্যু। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই আইন সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও তার নিয়মবিধি তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন এতদিনে সিএএ নিয়মবিধি তৈরি করা গেল না, তার কোন জুতসই ব্যাখ্যা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে।
করোনার কারণেই এই কাজটি করা যাচ্ছে না বলে বারবার অজুহাত দেখানো হচ্ছে অথচ বিধানসভা ভোটের মুখে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে বেরিয়ে বারবার সিএএর কথা শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর(Amit Shah) মুখে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে জনসভা করেন তিনি। সেখানে অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, করোনার টিকাকরণের কাজ মিটলেই মতুয়া সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু অসমে সিএএ নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি অমিত শাহ কিংবা বিজেপির রাজ্য নেতারা। অসমের ভোটে গত পাঁচবছরে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার কীভাবে উন্নয়নের কাজ করছে, তা নিয়ে প্রচুর কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। কিন্তু সিএএ নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি তিনি কিংবা রাজ্যের বিজেপি নেতারা।
বিশ্লেষকদের মতে, সিএএ-র বিরুদ্ধে অসমিয়া সমাজে আগাগোড়া ক্ষোভ রয়েছে। সিএএতে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ২০১৪-র ডিসেম্বর পর্যন্ত আগত সংখ্যালঘু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ অসম চুক্তিতে ১৯৭১ সালের পর যাঁরা রাজ্যে ঢুকেছেন তাঁদের সকলকে অনুপ্রবেশকারী বলা হয়েছে। অসমিয়া সমাজের বক্তব্য, সিএএ যদি কার্যকর করা হয় তাহলে অসম চুক্তি নিরর্থক হয়ে যাবে। আর এখানেই তীব্র আপত্তি অসমের সাধারণ মানুষের।
আবার সিএএ যতক্ষণ পর্যন্ত না কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ পশ্চিমবঙ্গে যে শরণার্থীরা এসেছেন, তাঁদের নাগরিক হিসেবে মান্যতা পাবেন না। যার ফলে মতুয়ারা তো বটেই, বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে বসবাসকারী ওপার বাংলার বহু মানুষ নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নাগরিকত্ব ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিনরাত তুলোধোনা করছে। সিএএ, এনআরসি বিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে সিএএ যে বিজেপির কাছে ক্রমশ শাঁখের করাতে পরিণত হচ্ছে, সেটা অমিত শা-দের বুঝতে আর বাকি নেই।