বাংলায় বিজেপির ‘সিএএ প্রতিশ্রুতি’ নিয়ে উত্তাল দেশ
ক্ষমতায় এসেই পশ্চিমবঙ্গে(West Bengal) সিএএ(CAA) কার্যকর—নির্বাচনী ইস্তাহারে(Election Manifesto) বিজেপির এই ঘোষণা এখন দেশজুড়ে চর্চা ও বিতর্কের ভরকেন্দ্র। আর তার প্রধান কারণ হল, এই আইন বাস্তবায়িত করতে হলে সবার আগে রুল তৈরি করতে হবে। সেই রুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তৈরি করবে, আর তারপর জারি হবে বিজ্ঞপ্তি। আগামী দু’মাসের মধ্যেই এই সরকারি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে না পারলে বাংলায় ‘প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে’ সিএএ কার্যকর করার স্বপ্ন বিজেপির অধরা থেকে যাবে। কারণ, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইনটি চালু করার অধিকারই অর্জন করবে না রাজ্য।
সাধারণ নিয়ম হল, কোনও একটি আইন সংসদে পাশ হয়ে যাওয়ার ছ’মাসের মধ্যেও সেই আইনের সমর্থনে রুল তৈরি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে সরকারকে। সেই প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হলে আবার লোকসভা ও রাজ্যসভার দ্বারস্থ হতে হয় সরকারকে। অতিরিক্ত সময় চেয়ে অনুমতি চাইতে হয় সংসদের কাছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আইনে পরিণত হয়েছিল সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল। কিন্তু ওই বছরের জুলাই মাস পর্যন্তও রুল তৈরি হয়নি। সেই কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অতিরিক্ত সময়সীমা প্রার্থনা করেছে সংসদের কাছে। সংসদীয় সাবঅর্ডিনেট কমিটি লোকসভার ক্ষেত্রে ৭ এপ্রিল এবং রাজ্যসভার ক্ষেত্রে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে। অর্থাৎ এই সময়সীমার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে রুল তৈরি করে ফেলতে হবে। কিন্তু এখনও তার কোনও দিশা নেই। অথচ বাংলার ইস্তাহারে সম্পূর্ণ উল্টো সুর গেয়েছে বিজেপি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্রুত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) অনুমোদনের। আবার ঠিক অন্য চিত্র দেখা যাচ্ছে তামিলনাড়ুতে। দক্ষিণের এই রাজ্যে এআইএডিএমকে তাদের ইস্তাহারে বলেছে, এনডিএ সরকারে এলে সিএএ বাতিল করার জন্য চাপ দেওয়া হবে কেন্দ্রের উপর। অথচ, তাদের সঙ্গেই জোট গড়ে ভোটের লড়াইয়ে নামছে বিজেপি। কংগ্রেস এবং তৃণমূল সরাসরি এই দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন, ‘টোটাল ফেক, জুমলা… রাজ্যের মন্ত্রিসভায় কীভাবে কার্যকর করবে? পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার পর ছ’মাসের মধ্যে রুলই গঠন করতে পারেনি। দেড় বছর ধরে সময় নিয়েই চলেছে। মানুষকে কি ওরা বোকা বানাচ্ছে না? মানুষই এর জবাব দেবে।’
শুধু এই নয়, এনআরসি নিয়েও বিজেপির প্রচারের সারবত্তা আজ প্রশ্নের মুখে। কারণ, সম্প্রতি রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই একটি প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, এনআরসি দেশজুড়ে চালু হওয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। তাহলে অমিত শাহের ঘোষণা কীসের ভিত্তিতে? ইস্তাহারেই বা এই প্রতিশ্রুতি গেরুয়া শিবির দিল কীভাবে? প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।