শঙ্কর ঘোষকে নিয়ে নাস্তানাবুদ বিজেপি
শিলিগুড়িতে দলীয় প্রার্থী শঙ্কর ঘোষকে নিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ বিজেপি। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার চারদিন পরও তারা ‘দলবদলু’ শঙ্করের সমর্থনে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ময়দানে নামাতে পারেননি। অন্যদিকে, ভোটের ময়দানে যথেষ্ট চনমনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সংযুক্ত মোর্চা শিবির। তাদের প্রার্থীরা কখনও ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে, আবার কখনও সাইকেল চালিয়ে ভোট প্রচার সারছেন। সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে এখানকার ভোটের ময়দান সরগরম হয়ে উঠেছে।
শিলিগুড়িতে (Siliguri) দলীয় প্রার্থী নিয়ে পদ্ম শিবিরে ক্ষোভ অব্যাহত। গত বৃহস্পতিবার প্রার্থী হিসেবে শঙ্কর ঘোষের নাম ঘোষণা হওয়ার পরই বিজেপির একাংশ কর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা খোদ দলের জেলা পার্টি অফিসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকী শঙ্করকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বেনামে পোস্টারও দেওয়া হয়। এই অবস্থায় ক্ষোভ সামাল দিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আসরে নামে বলে জানা গিয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে ফোনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কথা বললেও বরফ গলেনি। এখনও ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা এখানে দলীয় প্রার্থীর হয়ে ময়দানে নামেননি। তাঁরা হয়তো ভোটের ময়দানে নিষ্ক্রিয় থাকবেন।
ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ বলেন, শিলিগুড়ি কেন্দ্রের দলবদলু প্রার্থীকে কোনওভাবেই মানছি না। লালপার্টির ঘরে লালিত-পালিত ওই প্রার্থী যেকোনও দিন পদ্মের ঘরেও ছুরি মারতে পারেন। তাই প্রার্থী বদল না হওয়া পর্যন্ত এখানে প্রচারে নামছি না। খেলা এখনও বাকি রয়েছে। তা সময় হলেই দেখতে পারবেন। এমন পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, ‘দলবদলু’ শঙ্কর এখন পদ্ম শিবিরের কাছে কার্যত ‘গলার কাঁটা’। তাঁকে না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে। এর জেরে ভোটের ময়দানে পদ্ম শিবিরকে অনেকটাই নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিজেপি (BJP) প্রার্থী বলেন, আমি দলের শৃঙ্খলা মেনে চলি। এ ব্যাপারে যা বলার দলই বলবে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল অবশ্য বলেন, প্রার্থী নিয়ে দলে এখন কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ নেই। সমস্তটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। প্রার্থীকে নিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়েছি। পৃথিবীর বৃহত্তম এই দলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি না হওয়ায় এক-দু’জন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদেরকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।
অন্যদিকে, ঘর গুছিয়ে ভোটের ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূল (Trinamool)। তাদের প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র আবার সাইকেলে চেপে ভোট প্রচার করছেন। এরমধ্য দিয়ে পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধেও ভোটারদের কাছে বার্তা দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। আবার কখনও দলীয় ‘ক্যাপ্টেন’ রঞ্জন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা বাজারে ঘুরে পরিচয় পর্ব সারছেন। শুধু তাই নয়, পাড়া বৈঠক ও কর্মিসভাও করছেন তৃণমূল প্রার্থী। এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, ক্ষোভ বিক্ষোভ চাপা দিয়ে বর্তমানে তৃণমূল শিবির অনেকটাই চনমনে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মুখপাত্র (সমতল) বেদব্রত দত্ত বলেন, দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক আমরা। তাঁকে এই কেন্দ্র উপহার দিতে আদা-জল খেয়ে ময়দানে নেমেছি।
শুধু ঘাসফুল নয়, এখানে বামফ্রন্ট শিবিরও দলের ক্ষত সামলে প্রচারে জোর দিয়েছেন। এখানে সংযুক্ত মোর্চার বামফ্রন্ট প্রার্থী প্রবীণ সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি কখনও ক্রিকেট, ফুটবল, ক্যারাম খেলে ভোট প্রচার সারছেন। আবার কখনও ঘাড়ে দলীয় ঝাণ্ডা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এছাড়া পাড়া বৈঠক এবং দলের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করছেন। অশোকবাবু বলেন, বিজেপি ও তৃণমূলকে নিয়ে ভাবছি না। ময়দানে নেমে মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।