প্রার্থী নিয়ে তুমুল ক্ষোভ, মালদায় ছন্নছাড়া বিজেপি
অপছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে দলের কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অসন্তোষের জেরে নাজেহাল মালদহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। সীমান্তবর্তী এই জেলায় বিজেপির কার্যত ছন্নছাড়া অবস্থা। নব্য বিজেপির বাড়বাড়ন্তে আদিরা অনেকেই বসে গিয়েছেন। মালদহে বিজেপির সংগঠন মজবুত ছিল। কিন্তু প্রার্থী নিয়ে নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। কীভাবে দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা যাবে তা নিয়ে এখন নেতৃত্ব ভাবতে শুরু করেছে।
বিজেপির মালদহ জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, কোনও কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কর্মীরা আমাদের কাছে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। প্রার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে কর্মীরা অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই অভিযোগপত্র দলের উপর মহলে পাঠানো হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা হলেও জেলায় দলের সংগঠন অটুট রয়েছে। নির্বাচনে আমরা ভালো ফল করব।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মালদহে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব রয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে মালদহে বিজেপির উত্থান লক্ষ্য করা গিয়েছে। জেলার বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি জয়লাভ করে। পরে উপনির্বাচনে হবিবপুর আসনটি গেরুয়া বাহিনী দখল করে। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলায় বিজেপি অভূতপূর্ব সাফল্য পায়। উত্তর মালদহ লোকসভা আসনটি দখল করে। দক্ষিণ মালদহে বিজেপি (BJP) পরাজিত হলেও একাধিক বিধানসভা আসনে লিড পেয়েছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে ইংলিশবাজার, মানিকচক, মালদহ, গাজোল, হবিবপুর আসনে বিজেপি ব্যাপক লিড পেয়েছিল। ফলে ওই বিধানসভা আসনগুলি দখলের ব্যাপারে বিজেপি নেতারা গত দেড় বছর ধরে স্বপ্ন দেখছেন। বিধানসভা নির্বাচনের মুখেও ওই আসনগুলি নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো চর্চা হয়। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে আশানুরূপ ফলের ব্যাপারে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব অনিশ্চিত।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জেলার মানিকচক বিধানসভায় সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ জমা হয়েছে। তৃণমূলত্যাগী মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে আদি বিজেপি কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের একাংশ সদ্য বিজেপিতে আসা নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল। দলবদলু নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে কারচুপির অভিযোগও করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। ফলে সেই নেতাদের বিজেপির মাথায় বসানো এবং প্রার্থী করার বিষয়টি নিচুতলার কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, বাম জমানা থেকে আমি দল করছি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শে দলের দুর্দিনেও মুখ বুজে সংগঠন করে গিয়েছি। তার জন্য অনেক ঝড়ঝাপটার মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে তৃণমূলের (Trinamool) বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। তৃণমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে আমরা সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছি, তাঁরাই বর্তমানে আমাদের দলে চলে এসেছেন। কোথাও বাহুবলী নেতাকে দলে নেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার ছাপ্পায় অভিযুক্তকে প্রার্থী করা হয়েছে। এসব মেনে নেওয়া যায় না। দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু আসনে বিজেপির প্রতীকে যে কোনও বুথ স্তরের কর্মীকে দাঁড় করানো হলেও আমরা হাসতে হাসতে জিতে যেতাম। কিন্তু দলবদলুদের প্রার্থী করে ওইসব আসনে আমাদের কার্যত কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া হল। উপর মহলে প্রতিবাদ জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। দলের নেতাদের একাংশ দিনদিন বসে যাচ্ছেন। কোনও কারণে বিধানসভা নির্বাচনে ফল খারাপ হলে দলবদলুরা ফের তৃণমূলে ফিরে যাবে। কিন্তু একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীরা দলের দুর্দিনেও পদ্মফুলের ঝাণ্ডা ধরে থাকবেন। সেই বিষয়টি বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।