ছেলে প্রার্থী হতেই ভোলবদল মঞ্জুলকৃষ্ণের, ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজ
মাত্র একদিনের ব্যবধান। তার মধ্যেই কার্যত ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদল! বিজেপি(BJP) ৩০টি আসনে মতুয়াদের(Matua) প্রার্থী না করায় রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর(Manjul Krishna Thakur)। তিনি বলেছিলেন, এবারের ভোটে মতুয়া প্রভাবিত এলাকায় বিজেপি প্রার্থীদের জেতানোর দায়ভার নেবে না মতুয়া মহাসঙ্ঘ। বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত প্রতারণার অভিযোগ তোলার একদিন পার হতে না হতেই মঞ্জুলবাবুর মুখে কুলুপ। অন্যদিকে, তাঁর দুই ছেলের মুখে ঘুরছে বিজেপির স্তুতি। তাহলে ছেলের প্রার্থীপদের জন্যই কি বিদ্রোহের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মঞ্জুলবাবু। মতুয়া স্বার্থ নাকি পারিবারিক স্বার্থে আঘাতের আশঙ্কায়, বেসুরো হয়েছিলেন মঞ্জুলবাবু? আপাতত এই প্রশ্নেই সরগরম মতুয়া সমাজের বড় অংশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠাকুরবাড়ির আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে ২০১৪ সাল থেকে মঞ্জুলবাবু ও তাঁর দুই ছেলে সুব্রত ও শান্তনু ঠাকুর বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে নেন। ২০১৫ সালে বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে জেঠিমা তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরের বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করে পরাস্ত হন সুব্রত ঠাকুর। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নাগরিকত্ব ইস্যুতে সুব্রতবাবুর ভাই শান্তনু ঠাকুর জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুরকে পরাস্ত করে সাংসদ হন। এই ক’বছরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তনুবাবুদের সম্পর্কে দড়ি টানাটানি চলছে। এবারের ভোটে শান্তনুবাবুর অনুগামী মতুয়াদের বিজেপি প্রার্থী করা নিয়ে কয়েকদিনের টানাপোড়েন সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানাবে বলে মানছেন স্থানীয় মতুয় ভক্তরা। কারণ, রবিবার ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতাদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মঞ্জুলবাবু। তাতে ঘর থেকে লিখে আনা বয়ান পড়ে তিনি বলেন, প্রার্থীপদ না পেয়ে মতুয়ারা আশাহত। বিভিন্ন দিকে ক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মতুয়াদের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে কোনও দায়ভার নেবে না অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের আড়াই কোটি মতুয়া ভক্তকে কেন বঞ্চিত করা হল তা নিয়ে আমরাও প্রশ্ন তুলছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বড় বড় সভা হয়েছে। সেখানে লক্ষ লক্ষ মতুয়া ভক্ত এসেছেন। এত করা সত্ত্বেও মতুয়াদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? গুরুচাঁদের বাণী মানা হচ্ছে না। আমরা ৩০টি আসন চেয়েছিলাম। আমাদের একটা দাবি মানা হয়নি। বিজেপি পার্টির বোঝা উচিত, তাদের জন্য আমরা কত কিছু করেছি, তাহলে এখন মতুয়া ভক্তদের কেন দেখা হবে না? আমরা মতুয়া ভক্তদের স্বার্থে বলছি। আমাদের নিজেদের কোনও স্বার্থ নেই। আমরা বার্তা দিলাম। মতুয়ারা যা ইচ্ছে করবেন। কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের জানানো হবে।
রবিবারের এই সাংবাদিক সম্মেলনের পর সোমবার অমিত শাহ নিজে শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করেন। গাইঘাটায় শান্তনুবাবুর দাদা সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করা হয়। শুধু তাই নয়, বনগাঁ উত্তরে শান্তনুবাবুর ঘনিষ্ঠ অশোক কীর্তনীয়াকে প্রার্থী করা হয়। মঙ্গলবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর মঞ্জুলবাবু মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে শান্তনুবাবু বলেন, বিজেপি মতুয়া সম্প্রদায়ের আটজনকে প্রার্থী করেছে। দল যেভাবে মতুয়াদের সম্মান দিয়েছে তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি। মঞ্জুলবাবুর সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে বলেন, বাবার কাছে ভুল তথ্য ছিল। উনি সব তথ্য জানেন না। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে উনি ওই কথা বলেছেন। ওতে আমাদের কোনও মত নেই।