অধিকারী গড় কাঁথিতেই নিষ্প্রভ বিজেপি
শনিবারে যেন ‘শনির দশা’ অধিকারী গড়ে! ভোটের শুরু থেকে শেষ। কাঁথির বহু জায়গায় দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া গেল না বিজেপিকে! উত্তর কাঁথির ভাজাচাউলি থেকে দক্ষিণ কাঁথির মাজিলাপুর—ছবিটা মোটামুটি একই, নিষ্প্রভ পদ্মশিবির। এমনকী, সৌমেন্দু অধিকারীর গাড়িতে হামলার পরও তেমন কোনও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি।
আর এই ছবি ঘিরেই শুরু হয়েছে দুই কাঁথির ভবিষ্যৎ নিয়ে কাঁটাছেঁড়া। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়েও চলছে তুমুল চর্চা। দিনের শেষে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল (Trinamool)। বলছে, ‘কাঁথির দু’টো আসনেই আমরা জিতছিই।’ বিজেপির তরফেও বলা হচ্ছে, প্রথম পর্বে ভোট হওয়া জেলার সাতটি আসনের ফলাফল তাঁদের অনুকূলেই থাকবে। তবে ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কোথাও কোথাও বিজেপি ‘গুণ্ডাগিরি’ করেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে পোলিং এজেন্টদের। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘জনসমর্থন খুইয়েছে বিজেপি। গুণ্ডামি করতে বাইরে থেকে লোক এনেছিল। আমাদের কর্মীরা প্রতিহত করেছে।’
এদিন সকাল থেকেই কাঁথির সাবাজপুট প্রাইমারি স্কুলে ভোটগ্রহণ চলছিল ঠিকঠাকই। দলবদলু নেতা সৌমেন্দু অধিকারী সেখানে আসতেই গোলমাল বাঁধে। তিনি বিজেপি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কিছু মানুষ। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু ঘটনাস্থলে গেরুয়া শিবিরের লোকজন খুব একটা ছিল না। ফলে ছিঁটেফোঁটা প্রতিরোধ দেখা যায়নি। উল্টে তৃণমূলের ক্যাম্পে ছিল কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নজরে পড়েছে দক্ষিণ কাঁথির মাজিলাপুরেও। শ্যামরাইবাড় প্রাইমারি স্কুলে বুথ। তার থেকে খানিক দূরে তৃণমূলের ক্যাম্প। গেরুয়া শিবিরের তরফে কোনও ক্যাম্প নেই। ‘ওঁদের লোক কোথায়?’ বললেন তৃণমূল দিলীপকুমার ভুঁইঞা। সেই সঙ্গে যোগ করলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূল করি। আয়ারাম-গয়ারামদের নিয়ে আমাদের কিছু আসে যায় না।’ বিকেল তখন প্রায় ৩টে। গোবিন্দপুরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গোলমাল হচ্ছে বলে খবর আসে। ক্যুইক রেসপন্স টিম সেখানে যায়। কোনও উত্তেজনা নেই। বিজেপির ক্যাম্প অফিস ফাঁকা।
জেলা রাজনীতিতে উত্তর কাঁথি (Kanthi) বিধানসভা কেন্দ্রের ভাজাচাউলি অতি পরিচিত নাম। এখানে বুথের সংখ্যা ১৮টি। তৃণমূল নেতাদের হাসি এদিন বুঝিয়ে দিয়েছে, ভাজাচাউলির রায় যাবে তাঁদের পক্ষেই। সরেজমিনে ধানঘড়া প্রাইমারি স্কুল, ধানঘড়া জ্ঞানেন্দ্র বিদ্যালয়, বামুনিয়া প্রাইমারি স্কুল কিংবা ডুমুরবেড়িয়া প্রাইমারি স্কুলের বুথ ঘুরেও বোঝা গিয়েছে—ভূমিপুত্রের দলত্যাগেও তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যায়নি। পঞ্চায়েত প্রধান স্বপন বাগ বলছিলেন, ‘দলবদলুরা কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি।’
অন্যদিকে, ভগবানপুর কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল হয়েছে। অর্জুননগর, বরজ, জুখিয়া, ইটাবেড়িয়া এলাকার বেশকিছু বুথ থেকে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয় বিজেপি। বহু তৃণমূল ভোটারকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পৌঁছতে দেয়নি বলে অভিযোগ প্রার্থী অর্ধেন্দু মাইতির।