বর্ধমান দক্ষিণেও মনোনয়ন জমা বিক্ষুব্ধদের
বৈঠক ও অফার কিছুই কাজ দিল না। গেরুয়া শিবিরের আদি নেতারা যাতে সরাসরি ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসেবে না নামেন, তার সব চেষ্টাই বিফলে গেল। সঙ্ঘের তরফে বৈঠক ডাকা হলেও মিলল না রফা সূত্র। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। সোমবার বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেন বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা শিক্ষক স্মৃতিকান্ত মণ্ডল (SMRITIKANTA MONDAL)। পদ্মশিবিরের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দলের আদি নেতা-কর্মীরা নিজেদের সংগঠিত করছিল। গোঁজ প্রার্থীর প্রস্তুতিও সেরে নিয়েছিল তারা। স্মৃতিকান্তবাবু বলেন, বর্ধমান দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর বিরুদ্ধেই আমার লড়াই। এখানে প্রার্থী অযোগ্য বলেই নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলাম। আমি দলের বিরুদ্ধে নই, আমি সন্দীপ নন্দীর বিরুদ্ধে।
বর্ধমান উত্তরের পর বর্ধমান দক্ষিণ, এমনকী, রায়না ও খণ্ডঘোষেও বিজেপির দু’জন আদি নেতাকে বিক্ষুব্ধ হিসেবে লড়াইতে নামাচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি বিজেপির জেলা অফিসে বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনায় স্মৃতিকান্তবাবুকে পুলিস গ্রেপ্তারও করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি করে তাঁকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে এক বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ডও করা হয়। আর তাই এবার বদলা নিতে তিনিই বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন। বিজেপির বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশ্যে এদিন স্মৃতিকান্তবাবু বলেন, সরাসরি পার্টির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঝামেলা করে কিছুই হবে না। প্রার্থী পরিবর্তন হয় না। তার থেকে, যদি দম থাকে সবাই ভোটের ময়দানে নামো। বছরভর যাঁরা দলের জন্য কাজ করেছেন তাঁরাই আজ দল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই, সারা বছরের প্র্যাকটিসটা ভোটে পরখ করে দেখ।
এদিন জেলার বেশ কিছু বিজেপি প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিলেন। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় দলীয় প্রার্থী তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী বলেন, বিষয়টি জেলার সাংগঠনিক ও রাজ্য নেতৃত্ব দেখছে। নির্দল প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এদিন তিনিও মনোনয়ন জমা দেন। পাশাপশি রায়নার মানিক রায়, জামালপুরের বলরাম ব্যাপারী, মেমারির ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যও জেলাশাসকের দপ্তরে মনোনয়ন জমা দেন। তাঁরা প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
এদিন গলসির বিজেপি (BJP) প্রার্থী তপন বাগদিও মনোনয়ন দিতে আসেন। কিন্তু দল থেকে প্রতীক পাননি। শেষমেষ মনোনয়ন জমা না দিয়েই চলে যান। তপনবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, দলবদলু এক সাংসদের অঙুলিহেলনে দল গলসিতে প্রার্থী বদল করেছে। দীর্ঘদিন দল করে তিনি জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। নাম ঘোষণার পরও দল সরে যেতে বলায়, মানতে পারছেন না তপনবাবু। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, নাম ঘোষণার পরও দল টিকিট না দিলে তিনি পার্টি অফিসে আত্মহত্যা করবেন। এদিন জেলাশাসকের অফিস থেকে বেরিয়ে বলেন, আমি মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলাম। কাগজপত্র পরীক্ষা চলছিল। তখন আমার সঙ্গে আসা কর্মীরা ডাকলেন। ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করতেই বেরিয়ে আসি। তাই জমা দেওয়া হয়নি। দল আমার কেন্দ্রে অন্য কাউকে প্রার্থী করছে, একথা আমার জানা নেই। আমি দলের প্রতীক ছাড়াই এসেছিলাম কাগজপত্র দেখাতে। আমাকে দলের তরফে কিছু জানানো হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রে নতুন প্রার্থী হয়েছেন বিকাশ বিশ্বাস। দলবদলু বিজেপি সাংসদ সুনীল মণ্ডল বলেন, দল তপন বাগদিকে জানিয়েছিল, যে সে প্রার্থী হচ্ছে না। তারপরও কেন মনোনয়ন দিতে এসেছিল জানা নেই।