বিজেপি ছাপ্পা দিতে এলে হবে প্রতিরোধ, বলছে নন্দীগ্রাম
বিজেপি (BJP) ছাপ্পা দিতে এলেই জোরদার প্রতিরোধ হবে। মঙ্গলবার সাফ জানিয়ে দিল নন্দীগ্রাম(Nandigram)। পরিবর্তনের জমানায় নন্দীগ্রামে দলবদলু নেতার ঘনিষ্ঠদের অনেককেই ভোট লুট করতে দেখেছেন এখানকার বাসিন্দারা। ভোট দিতে গিয়ে চোখরাঙানির মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের। ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সেই সব মুখ চেনে নন্দীগ্রাম। কিন্তু এবার যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। তাই ভোট লুটের ছক ভেস্তে দেওয়ার পণ করেছে নন্দীগ্রাম। তাঁদের একটাই কথা, মানুষ এবার নিজের ভোট নিজে দেবে। প্রথম দফার নির্বাচনের আগের দিন কাঁথিতে ‘বহিরাগত’দের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। সেই ছকেই নাকি নন্দীগ্রামেও ‘মজুত’ বহিরাগত। যে গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছেন মমতা। মঙ্গলবার বিকেল থেকে ‘বহিরাগত’দের নন্দীগ্রাম ছাড়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হলদিয়া-নন্দীগ্রাম ফেরি সার্ভিস। রাতের দিকে শুরু হয় নাকা চেকিং। তল্লাশি চলে হোটেলগুলিতেও। ইতিমধ্যেই মহিষাদলের সার্কল ইন্সপেক্টর বিচিত্রবিকাশ রায় ও হলদিয়ার এসডিপিও বরুণ বৈদ্যকে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের জায়গায় এসেছেন যথাক্রমে শীর্ষেন্দু দাস এবং উত্তম মিত্র।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি ও নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে এই বিধানসভা। তার মধ্যে ১ নম্বর ব্লকের কেন্দামারি-জালপাই, কালীচরণপুর, দাউদপুর, মহম্মদপুর, সামসাবাদ ও সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা তৃণমূলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে খুব একটা সুবিধা হবে না বুঝেই বিজেপি নন্দীগ্রাম-২ ব্লককে টার্গেট করেছে বলে অভিযোগ। একটা সময় এই এলাকায় সিপিএম বেশ শক্তিশালী ছিল। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। তাই এই ব্লকে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা প্রবল। এই অবস্থায় নন্দীগ্রাম-২ ব্লক থেকে যতটা বেশি সম্ভব ফায়দা তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি।
হলদি নদীর একদিকে হলদিয়া, অন্যদিকে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি। ফেরি সার্ভিসই যোগাযোগের মাধ্যম। কেন্দেমারির এক ইটভাটার কর্মী রাঘব দাস বলছিলেন, ‘আমি বহুবার বুথে গিয়ে শুনেছি, ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। রাগে গজ গজ করতে করতে বাড়ি ফিরে এসেছি। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী। তাই নিজের ভোটটা নিজেই দেব। কেউ ভোট লুট করতে এলে উচিত জবাব পাবে।’
নন্দীগ্রামের বটতলার বাসিন্দা শেখ মুকলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা নন্দীগ্রামে রেললাইনের জন্য জমি দিয়েছি। বিজেপি আমাদের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করেছে। বহিরাগতরা বুথ দখল করতে এলে পালানোর পথ পাবে না। মানুষ উচিত শিক্ষা দেবে।’
নন্দীগ্রামের ৭ নম্বর জালপাইয়ের গণেশ গিরি ও কালীচরণপুরের ভীমচরণ সাউয়েরও সাফ কথা, ‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আমরা আন্দোলনের কর্মী। এখানে ভোট লুট করতে এলে প্রতিরোধ হবে।’
নন্দীগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল নেতা দীপঙ্কর বাগ বলেন, ‘প্রত্যেক বুথে প্রমীলা বাহিনী ঝাঁটা, লাঠি নিয়ে প্রস্তুত।’ বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রলয় পাল অবশ্য দাবি করেছেন, ‘নন্দীগ্রাম আসন থেকে আমাদের প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ হাজার মার্জিনে জিতবেন। সে জন্য ছাপ্পা মারার কোনও প্রয়োজন নেই।’ তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী ৪৭ হাজার ৬০০ ভোটে হারবেন। নন্দীগ্রামে ওঁর ভোট নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনে গিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। নন্দীগ্রামের ক্ষতি করতে চাইছেন।’