হাওড়ায় বহিরাগত ঢোকাচ্ছে বিজেপি, কমিশনে নালিশ তৃণমূলের
হাওড়ায় (Howrah) ভোট হবে দু’দফায়। ৬ এবং ১০ এপ্রিল— জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। তার আগেই ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে কমিশনের কাছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির ময়দান। এখন থেকেই বিজেপি হাওড়া স্টেশন এলাকার একাধিক হোটেলে ভিনরাজ্য থেকে ‘বহিরাগত’ দুষ্কৃতীদের এনে রেখেছে বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল (Trinamool)। কমিশনকে পাল্টা বিজেপি জানিয়েছে, যেভাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহিরাগত’ দেখলেই বাড়ি থেকে হাতা, খুন্তি, ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করার কথা বলেছেন মহিলাদের, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেই প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ভোটের সময় এলাকায় ‘বহিরাগত’ বলতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া আর কারও থাকার কথা নয়। সিপিএম সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও একাধিক অভিযোগ জানিয়ে আসে কমিশনের কাছে। তার মধ্যে রয়েছে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা বাড়ানো, পুলিসের নিরপেক্ষতা সহ নানা দাবি। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দুই শীর্ষকর্তা অজয় নায়েক এবং বিবেক দুবে হাওড়ায় আসেন। তাঁরা ভোট নিয়ে কখনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কখনও পুলিস ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দুই শীর্ষকর্তার বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতারা তাঁদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন।
গত শনিবার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম মাঠে এক জনসভায় মমতা অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ‘বহিরাগত’দের ঢুকিয়ে ঝামেলা করবে। প্রথম দফার ভোটে কাঁথিতে এরকম বহিরাগতদের তৃণমূলের মা-বোনেরা ধরে ফেলেছেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, হাওড়ার ভোটে ‘বহিরাগত’ ইস্যুটি বড় হয়ে উঠতে চলেছে। বিশেষত, প্রাচীন শহর হাওড়ায় নানা ভাষাভাষী, প্রবাসী মানুষ রয়েছেন ব্যাপক সংখ্যায়। মূলত অবাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে কে এখানকার ভোটার, কে বহিরাগত বা কয়েকদিনের জন্য এসেছেন, তা বোঝা মুশকিল। সেই সুযোগকে ব্যবহার করে বিজেপি বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ঢোকাচ্ছে বলে এদিন কমিশনের কর্তাদের কাছে অভিযোগ করে তৃণমূল। যা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতদিন দেখা গিয়েছে, সাধারণত শাসকদল দাবি করে, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হতে চলেছে। বিরোধীরা নানারকম অভিযোগ করে থাকে। এবার তৃণমূলই আগে থেকে এমন অভিযোগ সামনে আনায় তা রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের কারণ হয়েছে।
এদিন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে তৃণমূলের হাওড়া সদরের সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাওড়া স্টেশন চত্বরের বিভিন্ন হোটেলে ঠাঁই নিতে শুরু করেছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা প্রচুর দুষ্কৃতী। নির্বাচনে এরা গণ্ডগোল পাকাবে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তা যেন কমিশন দেয়। বিজেপি’র তরফে বিমল প্রসাদ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রধান। কিন্তু যে ভাষায় তিনি সাধারণ মানুষকে ‘বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করে মহিলাদের প্ররোচিত করছেন, তাতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘বহিরাগত’ বলতে তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই মূলত ‘টার্গেট’ করেছেন বলে মনে হয়। সিপিএমের দুই নেতা অরূপ রায় এবং সমীর সাহা বলেন, আমতার চন্দ্রপুরে আমাদের ৩৯২ জন সমর্থক ঘরছাড়া। তাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইলে ভুয়ো মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিস সব জায়গায় নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। নাজিরগঞ্জ, লিচুবাগান, থানামাকুয়া, গোয়াবেড়িয়া ইত্যাদি জায়গায় স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর ভরসা না করে পুলিসকেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর দায়িত্ব নিতে হবে বলে দাবি করেন তাঁরা।