নিজামুদ্দিনের জামাতই শুধু নয়, ভারতে করোনারোগী বাড়িয়েছে আরও দু’টো ঘটনা
চম্বলে করোনা, সচিবালয়ে করোনা। শুধু নিজামুদ্দিনের জমায়েতই নয়, ভারতে করোনারোগী (Coronavirus) বাড়ানোর জন্য দায়ী আরও দু’টো ঘটনা। দু’টোই মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh)। আর তার মধ্যে অন্তত একটিতে প্রশাসনের গাফিলতি স্পষ্ট।
নিজামুদ্দিনের ঘটনা নিয়ে গোটা দেশ যতটা ক্ষুব্ধ, তার সিকি ভাগ গুরুত্বও মধ্যপ্রদেশের দু’টো ঘটনাকে দেওয়া হয়নি। অথচ এই দু’টিই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
চম্বল (Chambal) অঞ্চলের মোরেনা (Morena) শহরের এক ব্যক্তির মা মার্চে মারা যান। ওই ব্যক্তি থাকতেন দুবাইয়ে (Dubai)। ১৭ মার্চ দুবাই থেকে ফিরে ২০ মার্চ তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধবাসরের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১৫০০ মানুষ। এই অনুষ্ঠান যখন হচ্ছে, ওই ব্যক্তির শরীর কিন্তু ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করেছে।
কিছু দিন পর জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্থানীয় এক হাসপাতালে যান। চিকিৎসকরা করোনার উপসর্গ দেখে তাঁকে যাবতীয় প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ওই ব্যক্তি সব প্রশ্নের উত্তরই দেন। কিন্তু আসল কথাটাই তখন তিনি বলেননি। যে তিনি দুবাই থেকে এসেছেন।
২ এপ্রিল গ্বালিয়রের (Gwalior) সরকারি হাসপাতালে সস্ত্রীক ওই ব্যক্তিকে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পর তাঁদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার পর দেখা যায় রিপোর্ট পজিটিভ। সঙ্গে সঙ্গে গোটা মোরেনা জেলা প্রসাশনের মধ্যে কার্যত থরহরিকম্প শুরু হয়ে যায়। ওই ব্যক্তি যে দেড় হাজার জনকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন সেটাও স্বীকার করে নেন।
মোরেনা জেলার জনসংখ্যা ৩ লক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের থার্মাল স্ক্রিনিং হয়। আরও ৩২,২৬৩ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়।
৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোরেনার ১৩ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আরও ২৪ জনের করোনা উপসর্গ থাকায় আইসোলেশনে ভরতি করা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
অন্য ঘটনাটি ভূপালের। কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক জমায়েতের জন্য এই ভাইরাস অবশ্য ছড়ায়নি। এর জন্য দায়ী এক আমলার চূড়ান্ত গাফিলতি। করোনাভাইরাস রোধে যে দফতরের দায়িত্ব সব থেকে বেশি, সেই স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক ব্যক্তি কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন, যাঁর সূত্র একজনই।
সপ্তাহের শুরুতেই কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হন মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যসচিব পল্লবী জৈন গোভিল। গোভিলের ছেলে আমেরিকা থেকে ফিরেছিলেন, এই খবরটি কাউকে না জানিয়েই করোনা মোকাবিলার জন্য যাবতীয় বৈঠক করে চলেন গোভিল, অভিযোগ এমনই।
গত রবিবার পর্যন্ত দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন গোভিল। এর পরেই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গোভিল বাড়িতেই আইসোলেশনে চলে যান এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দফতরের যাবতীয় কাজকর্মও সারতে থাকেন। তাঁর এই ভূমিকা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের প্রশংসাও কুড়িয়ে নেয়।
কিন্তু তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এর পর স্বাস্থ্য দফতরের আরও দুই আধিকারিকেরও করোনা ধরা পড়ে। আর অসংখ্য ব্যক্তির এই উপসর্গ দেখা যায়। সবাইকে আইসোলেশনে ভরতি করা হয়েছে।
তবে হাসপাতালে ভরতি হতেও নারাজ ছিলেন এই আধিকারিকরা, এমন অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও দফতরে এসেছিলেন সবাই। তার পর করোনা পজিটিভ গোভিলের সংস্পর্শে আসায় তাঁদের যে হোম কোয়ারান্টাইনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেটাও পালন করেননি।
শেষমেশ গত ৭ এপ্রিল, রাজ্যের মুখ্যসচিবের হস্তক্ষেপে এই আধিকারিকদের হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এই আধিকারিকরা গত দু’ সপ্তাহে কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, সেই তালিকা তৈরি করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
মধ্যপ্রদেশে প্রধানত দু’টো হটস্পট হয়েছে করোনাভাইরাসের। একটি ইনদওর, যেখানে রোগীর সংখ্যা ১৭৩, অন্যটি ভূপাল, যেখানে মোট রোগী ৯২। ভূপালের রোগীর সংখ্যা গত দু’তিন দিনে মারাত্মক বেড়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রদেশে এখন রোগীর সংখ্যা ৩১৩।