তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই বাড়ি বাড়ি প্রচারে সায়নী

এদিকে বাড়ির সবা‌ই যখন সায়নীকে দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন, তখন বাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করছে সারমেয় জকি। তার আওয়াজ পেয়েই ছুটে এসে আদর করলেন সায়নী।

April 2, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নায়িকা হয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আসিনি। প্রথমে একা স্বাধীনভাবে ছবি করেছি। লড়াই করে বড় হয়েছি। তাই অভিনেত্রী নয়, আসানসোলেও ঘরের মেয়ে হয়ে থাকব বলেই এসেছি। সবাই যদি তাপপ্রবাহে থাকতে পারে, আমি পারব না কেন? মুখে চুইনগাম চিবতে চিবতে একটানা কথাগুলো বলে গেলেন আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূলের (Trinamool) তারকা প্রার্থী সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh)। তখন মধ্য গগনে সূর্য। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করছে। মাঝেমধ্যেই ওআরএস মেশানো জলে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। লু বইছে। এই অবস্থাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে চলেছেন টলিউডের পরিচিত মুখ সায়নী। সাজ পোশাক থেকে ব্যবহারে নেই কোনও আড়ম্বর। তাই তাঁকে একটিবার দেখার জন্য প্রখর গরম, রোদ উপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে থাকছেন মানুষ। সায়নীও অবশ্য তাঁদের হতাশ করছেন না। আবদার মতো যুবক-যুবতীদের সঙ্গে সেলফি তুলে, বয়স্কদের পাঁ ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে সাধারণের মাঝে মিশে যাচ্ছেন।

সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত সুজয় মাজি করোনাকালে রোগীদের পাশে থেকে সেবা করেছেন। শেষমেশ করোনা কেড়ে নিয়েছে তাঁরই প্রাণ। একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে রয়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি সন্ধ্যা মাজি ও তারাপদ মাজি। হীরাপুরের মানিকচাঁদ পল্লিতে তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে সায়নী পেরিয়ে যাওয়ার সময় কেঁদে ওঠেন সন্ধ্যাদেবী। তৎক্ষণাৎ মিছিল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ঢুকে সন্ধ্যাদেবীর হাত ধরে মেয়ে সুলভ আচরণে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। নিজের দাদার মৃত্যুর ঘটনা বলে মনে জোর দিলেন সায়নী। নাতি ছোট্ট প্রাণজয়ের সঙ্গে ইংরেজিতে বার্তালাপ করে মাজি পরিবারে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে চললেন প্রার্থী। টিভির পর্দায় দেখা সায়নীকে চাক্ষুষ দেখার শখ ছিল বৃদ্ধ আশিস দাস ও তাঁর স্ত্রী ছন্দা দাসের। কিন্তু বয়সের ভারে রাস্তার মোড়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের মেয়ের কাছে সেই খবর শুনে সোজা বাড়িতে হাজির অভিনেত্রী। এদিকে বাড়ির সবা‌ই যখন সায়নীকে দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন, তখন বাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করছে সারমেয় জকি। তার আওয়াজ পেয়েই ছুটে এসে আদর করলেন সায়নী।

রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে। মিছিল এগিয়ে চলল সুকান্তপল্লির দিকে। কোনও নির্দিষ্ট বড় রাস্তা নয়, মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে অলিগলিতে ঢুকে পড়ছেন অভিনেত্রী। সুতির শাড়ি আর রোদ চশমাকে সঙ্গী করেই গরমের সঙ্গে লড়াই করে জয়ের জমি প্রস্তুত করছেন। তাঁকে নিয়ে মহিলা ও কমবয়সিদের উচ্ছ্বাস প্রথম থেকেই ধরা পড়ছিল। এদিনও সেই চিত্র বদলায়নি। এদিন রোদের মধ্যেও বয়স্কদেরও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ৮২ বছরের সবিতা সেনগুপ্ত প্রার্থীকে দেখার জন্য ছাতা নিয়ে বাড়ির দরজায় বসেছিলেন। ঠাকুমা বলে চিৎকার করে তাঁর পাশে বসে নিজেই ছাতা ধরলেন বৃদ্ধার মাথায়। নিলেন আশীর্বাদ। গরম হাওয়ার তেজ বাড়ছে। তাই চুইনগাম চিবিয়ে এনার্জি বাড়ানোর চেষ্টা করলেন প্রার্থী। দীর্ঘপথ হেঁটে কর্মীরা কিছুটা ক্লান্ত হলেও প্রার্থী ছুটে চলেছেন। আচমকা একটি বাড়িতে ঢুকে বললেন, কাকিমা জল খাওয়াবেন? জল আনতে গেলেন কাকিমা। তখনই বাড়ির ভিতর থেকে উঁকি দিলেন ৯২ বছরের নন্দিতা গুপ্তা। জলের সঙ্গে মিষ্টিও খেলেন। নন্দিতাদেবী বললেন, জয়ী হয়ে আবার এসো। মিছিল ভরদ্বাজপল্লি, কাঁকরডাঙা, রিভারভিউ কলোনি ঘুরে দুপুর ১টায় শেষ হল।

তবে সায়নীকে ফাঁকা মাঠ ছাড়তে নারাজ আর এক সেলিব্রিটি প্রার্থী বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালও। সায়নীর মতো ছুটতে না পারলেও টোটোয় এলাকা চষছেন তিনি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen