জেনে নিন চড়ক পুজোর ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। বছর শুরুও যেমন হয় উৎসব দিয়ে তেমনি শেষও হয় উৎসব দিয়েই। চৈত্র মাস মানে চড়ক মেলা বা চড়ক পুজো। চড়ক মানেই গাজন, গম্ভীরা আরো কত কি! প্রায় একমাস ধরে চলে এই উৎসব। পুরো চৈত্র মাস ধরে।
জানেন কি এই চড়ক পুজোর ইতিহাস? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবারাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পুজোর উল্লেখ নেই। পূর্ণ পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত গোবিন্দানন্দের বর্ষক্রিয়াকৌমুদী ও রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্বেও এ পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তবে, পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এই উৎসবের প্রচলন ছিল। উচ্চ সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়। কথিত আছে ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর এই পুজো প্রচলন করেন।
জনশ্রুতি আছে এই দিনে শিব উপাসক বানরাজা কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে আহত হয়ে মহাদেবের কাছে অমরত্ব লাভের আশায় তাঁকে প্রসন্ন করার কন্যে নাচ-গান পরিবেশন করেন। তাতে তিনি সিদ্ধি লাভও করেন। সেই স্মৃতিতেই শৈবরা ওই দিন শিবের উপাসনা করে থাকে।
গম্ভীরা পুজো বা শিবের গাজন এই চড়কপুজোরই রকমফের। চড়ক পুজো চৈত্র সংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিন পালিত হয়।এ পুজোর বিশেষ অঙ্গের নাম নীলপুজো। পুজোর আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত লম্বা কাঠের তক্তা (‘শিবের পাটা’) রাখা হয়, যা পুজোরিদের কাছে “বুড়োশিব” নামে পরিচিত।
চড়ক পুজোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হল কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পুজো করা।
কালের নিয়মে আজ চড়ক পুজো হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলায় কিছু কিছু জায়গায় এই উৎসব হয়ে থাকে।