শীতলকুচিতে গুলি চালনার পদ্ধতি নিয়ে বিস্মিত প্রাক্তন পুলিস আধিকারিক
কোচবিহারের শীতলকুচিতে (Sitalkuchi) গুলি চালানোর পিছনে কোনও যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন প্রাক্তন পুলিসকর্তা থেকে আইনজ্ঞরা। ঘুরেফিরে তিনটি প্রশ্নই বেশি করে ভাবাচ্ছে তাঁদের। এক, পরিস্থিতি কি সত্যিই কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল? দুই, কৌশলী হয়ে কি গোলমালের মোকাবিলা করা যেত না? তিন, সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলি চালানোর নির্দেশ দিল কে?
১৯৯৩ সালের কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানের দিন ব্রাবোন রোডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তদানীন্তন ডিসি ট্রাফিক চয়ন মুখোপাধ্যায়। শীতলকুচির প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সেদিন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা রীতিমতো মারমুখী ছিলেন। কিন্তু একটি বারের জন্য গুলি চালানোর কথা ভাবেননি তিনি। টিয়ার শেল ফাটিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিলেন। আসলে এইরকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিসের লক্ষ্যই থাকে সবচেয়ে কম শক্তি প্রয়োগ করে বেশি সাফল্য। সেই কারণেই তো পুলিস বা কেন্দ্রীয় বাহিনীতে .মাসের পর মাসে ট্রেনিং চলে। রায়ট কন্ট্রোল ট্রেনিংয়ে সবকিছু শেখানো হয়। পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হবে, তা হাতেকলমে করে দেখানো হয়। চয়নবাবুর ব্যাখ্যা, যে কোনও জায়গায় গোলমাল হতেই পারে। কিন্তু তা থামাতে প্রথমে চালাতে হবে লাঠি। তাতেও আইনভঙ্গকারীরা এলাকা না ছাড়লে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়তে হবে। তাতেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। বাকিটা ধাওয়া করে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতকিছুর পরেও যদি সত্যিই বিক্ষোভকারীরা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়, তখনই গুলি চালানোর প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হয় পুলিস রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি)-এর নির্দেশাবলীকে। সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, গুলি চালাতে হবে হাঁটুর নীচে। খুব বড়জোর হলে কোমরের নীচে। তার উপরে কখনই উঠবে না। অর্থাৎ, আহত হলেও যেন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে।
শীতলকুচিতে এই কপি বুক ফলো করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে চয়নবাবুর। পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল, এমন কোনও প্রমাণ এখনও উঠে আসেনি। প্রাক্তন এই পুলিসকর্তার কথায়, ‘সিআইএসএফ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী এখানে ডিউটি করতে এলে তাদের একটা ভাষার সমস্যা থাকে। তাই তাদের সঙ্গে স্থানীয় কনস্টেবল বা অফিসার থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে ভাষাগত কোনও সমস্যা ছিল কি না, তা জানা জরুরি।’ আইনজীবী অরূণাভ ঘোষ আবার প্রশ্ন তুলছেন, সিআইএসএফেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিল কে? এক্ষেত্রে জেলা শাসক যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর লিখিত অর্ডার কোথায়? এক্ষেত্রে মৌখিক নির্দেশে কিছু হয় না। তাই প্রথমেই চিহ্নিত করা দরকার গুলি চালানোর অর্ডার কার থেকে পেল কেন্দ্রীয় বাহিনী। অর্ডার না থাকলে তারা গুলি চালাতে পারে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘিরে ধরা হয়। তাহলে সিআইএসফের কেউ আহত হলেন না কেন? পুলিসের কেউ আহত হননি। এমনকী, আগ্নেয়াস্ত্র বার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাহলে সেই আর্মস বাজেয়াপ্ত করে স্থানীয় থানায় জমা দিয়ে তারা লিখিত অভিযোগ করেছে কি? আর ধারালো অস্ত্রসস্ত্রই বা গেল কোথায়? কারণ গুলি চালানোর পর কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ধরা ভোটাররা সেগুলি ফেলে পালাবে, এটাই স্বাভাবিক। পরে সেগুলি কি বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইএসএফ? অরুণাভবাবুর আরও একটি গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘শোনা যাচ্ছে, আগ্নেয়াস্ত্র বের করেছিল একজন। তাহলে তাকে ধরার টার্গেট না করে সকলের উদ্দেশ্যে কেন গুলি চালিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফোর্স?’