ফুটেজ কোথায় ? শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রসারভারতীর প্রাক্তন প্রধান
শীতলকুচির ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল, এখনও পুরোপুরি বোঝাই যাচ্ছে না! প্রশ্ন তুললেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার (Jawhar Sircar)। তিনি বলেন যে যেটা জানতে পারা গেছে, চারজন ভোটার মারা গিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে। চারজনই স্থানীয় বাসিন্দা। যারা মেরেছে তারা সিআইএসএফ। গুলিচালনার পিছনে কেউ কোনওভাবে প্ররোচনা দিয়েছিল কি না, সেই খবরটা এখনও কেউ বের করতে পারেনি।
তিনি বলেন, পুলিস বলছে, বাহিনীকে আক্রমণ করা হয়েছে। বন্দুক ছিনতাই করার চেষ্টাও চলেছে। কিন্তু এই দাবির সপক্ষে একটা প্রমাণ দিতে হবে! আজকাল সবার হাতেই মোবাইল ক্যামেরা। কোনও ঘটনা ঘটলেই লোকে ছবি, ভিডিও তুলতে আরম্ভ করে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল, কিন্তু এখনও কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। কেউ ভিডিও তোলেনি, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী জানে, গুলি চালালে তার তদন্ত হয়। ফলে তদন্তের প্রস্তুতি হিসেবেই হোক অথবা উদ্ভুত বিতর্কের সমাধান—কিছু একটা প্রমাণ দেখাতেই হবে।
তিনি বলেন, এই ঘটনার আরও একটা দিক রয়েছে। সিআইএসএফ কোনওদিন আইনশৃঙ্খলা সামলায়নি। কিছু ক্ষেত্রে সিআরপিএফ এমন পরিস্থিতি সামলেছে। সীমান্তে মোতায়েন থাকা বিএসএফ জওয়ানদেরও মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে তার কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়। সিআইএসএফ মূলত এয়ারপোর্ট, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এসব পাহারা দেয়। তাদের দিয়ে ভোটে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাটা ঠিক কি না, সেই প্রশ্নও থাকছে। যে বাহিনী স্থানীয় ভাষা বা মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানে না, তাদের মোতায়েন করলে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। এসব চিন্তা করে বাহিনীকে কাজে লাগানো উচিত ছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে এবং বেশি সংখ্যায় পাঠানো হবে, এটা পরিকল্পনা করার আগে কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়। শক্তি আছে বলে অঢেল ফোর্স পাঠিয়ে দিলাম, এটা গণতান্ত্রিক অভ্যাস নয়, মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০ বছর আগে তিনি দু’টি নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। তাঁর মনে আছে, তখনও সিআইএসএফ আনার ব্যাপারে সম্মতি দিননি। উত্তরপ্রদেশ পুলিসের বিরুদ্ধেও বলেছিলেন, এই ফোর্সের অনেক বদনাম আছে। এবং এরা বাংলায় এলে এখানকার সংস্কৃতি কিছুই বুঝবে না। অতএব, উল্টোপাল্টা ঘটনা ঘটতে পারে। এদের পাঠাবেন না। পশ্চিমবঙ্গে যে পুলিসরা কাজ করেন, তাঁদের ধৈর্য্য কিন্তু অনেক বেশি। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেন না। আসলে বন্দুক দিয়ে আইনশৃঙ্খলা সামলানো অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যাপার। একটা স্তরের পরও যারা প্রতিবাদ করছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের পিটিয়ে বা গুলি চালিয়ে ঠান্ডা করে দেওয়ার কথা ভাবে। তখন ফোর্স নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বলতে হয়, ‘দাঁড়ান না মশাই! চুপ করে থাকুন। দেখছি কী করা যায়!’ এভাবেই সংযত থাকতে হয়। গুলি চললে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যদিকে চলে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুলি চালানোটা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।
শীতলকুচির ঘটনায় পুরো তথ্য না পেয়ে কিছুই বলা যাবে না। কিন্তু কারা বাহিনীকে প্ররোচনা দিয়েছিল? কতজন জওয়ান জখম হয়েছেন? এই তথ্য সামনে আসা জরুরি। ধস্তাধস্তি হলে তাদেরও আঘাত লাগার কথা। তবে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এল না, এটা খুব আশ্চর্যের বলে তিনি মনে করেন। প্রাথমিক রিপোর্টে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে, মনে করেন তিনি।