রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভাঁওতা, বলছেন মতুয়ারা

April 12, 2021 | 2 min read

সবুজ ধানখেতের পাশে ছোট মন্দির। একই ছাদের তলায় বসবাসের ঘর। সেখানে চার-পাঁচ সদস্যের সংসার নিয়ে বসবাস করেন বছর ৭৫-এর সমীর কীর্তনীয়া ওরফে ক্যাথা গোঁসাই। হাঁসখালি ব্লকের ময়ূরহাট-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। গৌরনগর প্রাথমিক স্কুল মাঠ শেষ করে ছোট ইটের রাস্তা ধরে এগতেই গোলগলা আধময়লা সাদা গেঞ্জি ও ধুতিপরা একগাল দাড়ি ভর্তি সমীরবাবু এগিয়ে এলেন। খেতের আলের ধারে মন্দিরের চাতালের পাশে বসতেই প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন না তিনি। নিজেই বলতে শুরু করলেন নিজের অভাব-অভিযোগ থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকারের আমলে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার কথা। আঙুল উঁচিয়ে ভাগে নেওয়া ধানের জমি দেখিয়ে বলেন, কী করে চলবে বলুন? ডিজেলের যে দাম বেড়েছে তাতে চাষের খরচ তুলতে পারব না। ফ্রিতে গ্যাসের সংযোগ পেলেও এখন তার দ্বিগুণ দাম। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।

কথোপকথনের মাঝে প্রতিবেশী সাধনা বিশ্বাস, মণিমালা বিশ্বাসরা এগিয়ে আসেন। সাধনাদেবী বলেন, কী আর বলব! দিদি তো খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচাচ্ছেন। লকডাউনে চাল, ডাল পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। মেয়ে সবুজ সাথীর সাইকেল, কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে। এখন টিভিতে দেখছি, বিজেপি নেতারা বলছেন আমাদের নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু, আমাদের তো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। নতুন করে কী দেবে? পাশ থেকে শম্পা মণ্ডল বলেন, ওসব করা মানে আবার লাইনে দাঁড়াও। পঞ্চায়েত-বিডিও অফিসে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকো! কাজের কাজ কিছু হয় না। কই জিরো ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্টে টাকা দেবে বলেছিল, দিল না তো। তাঁকে থামিয়ে শুভ কীর্তনীয়া বলেন, মোদি এখানকার লোক নয়। উনি কিছুই করবেন না। কারও ভালো হবে না।

মাজদিয়ার ন’ঘাটার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ সেবাশ্রমে বসে দলপতি ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, মতুয়াদের জন্য মমতা ভাতা সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এমনিতেই এখন কার্ডে কার্ডে মানুষ জর্জরিত। সিএএ-এনআরসি হলে আগেই মতুয়ারা বিতাড়িত হবে। সবটাই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঝামেলা বাধানোর কাজ। তাঁরই পাশে বসা ব্যবসায়ী শরৎ সরকার বলেন, আগে অসমের সমস্যাটা সমাধান করতে বলুন। ওখানে ১৪লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে।

রানাঘাট লোকসভার হাঁসখালি ব্লকের আটটি ও কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের সাতটি মিলিয়ে মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা গঠিত। অধিকাংশ ভোটার হিন্দু। তাঁদের মধ্যে আবার প্রায় ৪৫ শতাংশ নমঃশূদ্র ও মতুয়া মতাবলম্বী। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের ভোটের উপর ভিত্তি করে ভোটপ্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলা চলে। মতুয়াদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সাতটি বিধানসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মতুয়া এই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভায় রয়েছেন। ভাজনঘাট টুঙ্গি, ধরমপুর নালুপুর, শোনঘাটা, গোবিন্দপুর, স্বর্ণখালি, জয়ঘাটা কাদিপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মতুয়াদের বসবাস। তাঁদের অধিকাংশের বক্তব্য, মতুয়াদের নিয়ে টানাটানি না করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি আটকানোর ব্যবস্থা করা হোক। চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা বজায় থাক।

তৃণমূল (Trinamool) প্রার্থী তাপস মণ্ডল বলেন, মতুয়াদের( Matua) সেন্টিমেন্ট আমি জানি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের জন্য যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, তা ধ্বংস করতে চাইছে বিজেপি। নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে ভোট কাটাকুটির অঙ্ক কষছে বিজেপি। তাতে লাভ হবে না। কারণ, বিজেপির মতে নাগরিকত্ব পেতে আগে নিজেকেই অনাগরিক ঘোষণা করতে হবে। মানুষ সেই ভুলটা করবে না। বিজেপি প্রার্থী আশিসকুমার বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মতুয়াদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো হবে। বিগত সরকারের আমলে এলাকায় কার্যত কোনও কাজই হয়নি। মানুষের অনেক অভাব-অভিযোগ আছে। সেগুলো পূরণ করা হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #Matua, #Mamata Banerjee

আরো দেখুন