করোনার ঠেলায় পাঁজি বিক্রি বিশ বাঁও জলে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তারপর দাঙ্গা, নকশাল আমল – কোনও পরিস্থিতিই এখনকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিক্রী হয়নি ভাল। দাঙ্গার সময় দোকান খোলা যায়নি। নকশাল আমলে চারটের পর দোকান খোলা রাখা যায়নি। কিন্তু একরম ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি কখনো| বাজার পুরোপুরি বন্ধ, এরকম এর আগে কখনোই হয়নি।
কলেজ স্ট্রীট শুনশান, কোথাও কেউ নেই। এতে বাজারের পাশাপাশি ক্ষতি হল বাংলা সাহিত্যেরও। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইপত্রর ভাল বিক্রী হচ্ছিল। আবার বাজার না খুললে বোঝা যাবে না সেই বিক্রী বজায় থাকবে কি না।
পাঁজির বিক্রীর সময় এইটাই। গুপ্তপ্রেস, বেণীমাধব শীল- কিচ্ছু বিক্রী হয়নি। নববর্ষ উপলক্ষে এই সময় বিশেষ ছাড় দেয় সব প্রকাশকই কমবেশী। বইমেলা হয় কলেজ স্কোয়ারে। কিন্তু এখন তো কোনও দোকানই খুলছে না, মেলা তো দুরস্থান। ফলে সেই বিক্রীটাও হল না। লকডাউন উঠে গেলেও এ ক্ষতি পূরণীয় নয়।
যদি মে মাস অবধি লকডাউন চলে, তাহলে দেড়মাস বিক্রী বন্ধ। প্রকাশনার প্রায় চার কোটি টাকা টার্নওভার। এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে লেখকদের উপর, বাইন্ডারদের উপর, আমাদের অন্যান্য কর্মচারীর উপর – সকলের উপরই পড়বে।
লকডাউন করে রোগটাকে আটকানো যাবে, কিন্তু খিদে? রবীন্দ্রনাথের দু’-লাইনের কবিতাটা “দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি।/সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি ?’
এক-একজন মুটে, যাদের দৈনিক রোজগার ৮০-১০০ টাকা। তাদের সংসার কিভাবে চলছে? যারা রিকশা চালান বইপাড়ায়, তাদের তো আর কোনও খদ্দের নেই। এপাড়ায় ঝালমুড়ি বেচে তাদের চলে, তাদের দিন কিভাবে কাটবে? এই যে বৈঠকখানা রোড থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে বাইন্ডাররা থাকেন, তারা কঠিন দারিদ্রের মধ্যে থাকেন। তাদের কি অবস্থা এখন? প্রকাশকরা না হয় দু’-তিন বছরের মধ্যে এই ক্ষতি সামলে নিতে পারবে, কিন্তু, তারা কিভাবে সামলাবে?