রি-পোলে গুলির জবাব দিতেই প্রস্তুত আমতলি
রি-পোলে বুলেটের জবাব ব্যালটে দিতে প্রস্তুত শীতলকুচি (Sitalkuchi) ব্লকের আমতলির ১২৬ নম্বর বুথের ভোটাররা। শনিবার ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালানোর পর এখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কমিশন। সেদিন আতঙ্ক আর গ্রামের তরতাজা চার যুবককে হারনোর ব্যথা বুকে চেপে বুথ থেকে চলে গিয়েছিলেন ভোটাররা। কমিশন এই বুথে রি-পোল করবে। যদিও এখনও পর্যন্ত কবে পুনরায় ভোটগ্রহণ হবে তা জানানো হয়নি। তবে ভোট যেদিনই হোক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলির মোক্ষম জবাব দিতে প্রস্তুত বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ভোটের বাক্সে উচিত জবাব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তাঁরা এ ব্যাপারে সংকল্প নিয়ে ফেলেছেন।
একরাশ ক্ষোভ আর স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ব্যালটে এর জবাব দেবে গোটা গ্রাম, সোমবার গ্রামে বসে এ কথাই বলছিলেন স্থানীয় তৃণমূল (Trinamool) যুব নেতা আজিবুল হোসেন।
জেলা নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমতলি গ্রামের ১২৬ নম্বর বুথে মোট ভোটার ৯৪৯ জন। এরমধ্যে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ৬৬৪। হিন্দু ভোটার আছেন ২৮৫ জন। শতাংশের হিসেবে এই বুথে ৭০ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বাকি ৩০ শতাংশ ভোটার হিন্দু। এরমধ্যে বুথ এলাকা লাগোয়া একটি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের পাড়া আছে। অতীতে অনেক ভোট হয়েছে। কিন্তু, কোনও দিনই এই বুথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়নি। সবাই মিলে একসঙ্গেই চলতে অভ্যস্ত আমতলি গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে বিজেপির লোকজন এলাকায় এসে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে শুরু করে। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে এলাকায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, তারপরও এলাকায় কোনও অশান্তি হয়নি। ভোটের দিনও সকাল থেকে এলাকা শান্তই ছিল। গ্রামের রাস্তা, নদী বাঁধ, বিদ্যুৎ, ১০০ দিনের কাজ সহ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সবাই পেয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেকথা ভোলেনি গ্রামের মানুষ। সেখানে এমনটা হবে কল্পনা করা যায়নি।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই বুথে বিজেপির ইশারায় পূর্বপরিকল্পনা করেই কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি করেছে, এমনটা আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতারা। স্থানীয় গ্রামের নেতাদের থেকে শুরু করে ব্লক স্তরের নেতারা বলছেন, ভোটের দিনে এজেন্ট বসানো নিয়ে অনেক জায়গায় বচসা হয়, এবারেও হয়েছে। যেখানে বিজেপির শক্তি বেশি সেখানে ওরা আমাদের এজেন্ট বসাতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু, গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি কোথাও হয়নি। আমতলির বুথেও গুলি চালানোর পরিস্থিতি ছিল না। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন বুথে গুলি চালানো হয়েছে।
শনিবার সকালে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে হিন্দু-মুসলমান সকলেই পাশাপাশি থেকে ভোট দিচ্ছিলেন। অনেকেই ঠাট্টা মশকরা করছিলেন। হাসিমুখে লাইনে দাঁড়িয়েছিল সকলেই। তারপর আচমকা হইহট্টগোল, তারপরই হঠাৎ গুলি চলতে শুরু করে। চোখের পলকে শেষ হয়ে যায় চারটি তাজা প্রাণ। যুব নেতা আজিবুল হোসেন এ কথাই বলছিলেন।
সেদিনের পরিস্থিতি দেখে অবশেষে ভোট বাতিল করে কমিশন। রি-পোল হবে বুথে। সবাই ভোট দেবে, তবে সবার মুখে এককথা, গুলির জবাব ব্যালটেই দেব। বুথ থেকে খানিকটা দূরে রাস্তার পাশে বাড়ি মধু দাস, সুধীর দাসের। তাঁরাও বলছিলেন, হিন্দু-মুসলমান আমরা সবাই এখানে একসঙ্গে চলাফেরা করি। উৎসব, অনুষ্ঠানে একে অপরকে আমন্ত্রণ করি। এতগুলি প্রাণ ঝরে গেল মেনে নেওয়া যায় না। এখানে আবারও ভোট হবে। আমরা এর জবাব ইভিএমে দেব।
গোলকগঞ্জ বাজার চৌপথিতে দাঁড়িয়েছিলেন শীতলকুচি ব্লক তৃণমূল সভাপতি তপন গুহ। তিনি বলেন, মানুষে মানুষে বিভেদ করছে বিজেপি। এটা কোনওভাবে মানা যায় না। রি-পোলে বিজেপি বুঝবে মানুষ কাকে সমর্থন করে।
তৃণমূল শ্রমিক কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় বাসিন্দা আলিজার রহমান বলেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে যে হত্যালীলা চালিয়েছে, এলাকার মানুষ তার জবাব রি-পোলে দেবে। বিজেপির এসসি মোর্চার সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, কে উস্কানি দিচ্ছে, সবাই জানে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। ২ মে ইভিএম খোলার পর সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।