নির্বাচন কমিশন বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, ক্ষোভ মমতার
করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হচ্ছে সারা দেশে। পশ্চিমবঙ্গও এর ব্যতিক্রম নয়। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এরইমধ্যে আগামী শনিবার রাজ্যের চলতি বিধানসভা নির্বাচনের পঞ্চম পর্যায়ের ভোট। তারপরও বাকি থাকছে তিন দফার ভোট। ওই শেষ তিন দফার ভোট একসঙ্গে সম্পন্ন করে ফেলার দাবি নানান মহলে উঠেছে। আজ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের। তার আগে শেষ তিন দফার ভোট এক দফায় করার দাবি জানালেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা নববর্ষের দিনে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকারে এই দাবি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
করোনা (Covid19) সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য বিজেপির বহিরাগতরা দায়ী বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের সময় করোনা সংক্রমণজনিত বিপদের কথা মাথায় রেখে শেষ তিন দফার ভোট একসঙ্গে করার যে দাবি উঠেছে, তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই আট দফায় ভোটের বিরোধিতা করেছিলাম। তামিলনাড়ু, অসম, কেরলের মতো রাজ্যে যেখানে এক-দু দফায় ভোট সেরে ফেলা হচ্ছে, সেখানে এই রাজ্যে এতগুলি দফায় ভোট কেন করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছিলাম। এখন কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে যদি শেষ তিন দফার ভোট একসঙ্গে করা যায়, তা কাম্য।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, শনিবার পঞ্চম দফায় ভোট। ওই ভোট হয়ে গেলে..বাকি থাকছে তিন দফা। এরমধ্যে ২২ এপ্রিলের ষষ্ঠ দফার ভোটের পর ২৬ ও ২৯ এপ্রিলের ভোটটাও অনন্ত এক দফায় করা যেতে পারে। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তো আমাদের কথা শুনবে না। তারা বিজেপি ও কেন্দ্রের কথাই শুনবে। কিন্তু রাজ্যের মতামতও এক্ষেত্রে শোনা উচিত।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতির থেকে মানুষের জীবন মূল্যবান। মিটিং-মিছিল থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কার কথাও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, কিন্তু মিটিং-মিছিল হলেও তো লোক আসবেই। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট থাকলে তো ভোটের প্রচার করতে হবে। আর মিটিং-মিছিলে সবাই তো মাস্ক বা দূরত্ববিধি মেনে চলেন না।
একইসঙ্গে মিটিং-মিছিলের জন্য বাইরে থেকে লোক আনার অভিযোগ বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য বাইরে থেকে লোক আনা হয়। এই মিটিংয়ের জন্য এক-একটা হ্যাঙ্গার তৈরি করতে কয়েকশ লোক লাগে। তারা বাইরে থেকে আসে। তাদের মধ্যে অনেকেই কোভিড আক্রান্ত থাকতে পারে। এভাবে বহিরাগতদের আসার ফলে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলেও তৃণমূল নেত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, নন্দীগ্রামে বিজেপির এক-একজন নেতা আসতেন ২০-২২ গাড়ির কনভয় নিয়ে। এই গাড়িতেও বহিরাগত থাকত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে মিটিং-মিছিল করছে। এতে কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
মমতা বলেছেন, আট দফায় ভোট না হলে এই সমস্যা হত না। তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই আট দফায় ভোট করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলেও তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সংখ্যালঘু ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে মন্তব্যের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিশন। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, একপক্ষ যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ বলছে, চারজনকে মেরে দাও। কিন্তু তাদের কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু অন্যদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে রোজ ভ্যাঙাচ্ছেন, অমিত শাহ মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এর পাশাপাশি ট্যুইট করেও মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইট করেও কোভিডজনিত পরিস্থিতিতে রাজ্যে বাকি দফার ভোটগুলি এক দফায় করার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর ট্যুইট-চলতি অতিমারীজনিত পরিস্থিতিতে আমরা পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (election commission of india) আট দফায় ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্তের কঠোরভাবে বিরোধিতা করি। এখন করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ায়, আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে বাকি দফাগুলি এক দফায় করার আর্জি জানাচ্ছি। এমন এলে তা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করবে।