লকডাউনের ২১ দিন পার, মোদীর আশ্বাসের চাল এখনও পায়নি বাংলা
করোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন ঘোষণার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বড় মুখ করে জানিয়েছিলেন, কাজকর্ম বন্ধ হলেও গরিব মানুষকে যাতে অভুক্ত থাকতে না-হয়, সে জন্য জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা যোজনার (এনএফএসএ) অন্তর্ভুক্ত রেশন গ্রাহকদের বিনামূল্যে সরকার থেকে চাল-ডাল দেওয়া হবে। এপ্রিল, মে এবং জুন–তিন মাস এই পরিষেবা চালু থাকবে। তাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন গরিব মানুষ।
কিন্তু লকডাউনের প্রথম পর্বের ২১ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো বিনা পয়সার চাল-ডাল এখনও চোখে দেখতে পাননি রাজ্যবাসী। আপাতত রাজ্য সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের রেশনেই দিন কাটছে গরিব মানুষের।
রাজ্য খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা যোজনার আওতাভুক্ত মানুষদের (অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড) প্রতি মাসে মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল এবং পরিবার-প্রতি এক কেজি করে ডাল পাওয়ার কথা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল লাগবে। তিন মাসে মোট চাল দরকার ৯ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে এ রাজ্যে এফসিআইয়ের গুদামে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুত আছে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে রেশন দেওয়া অসম্ভব বলেই মনে করছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। জট কাটাতে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ফুড কমিশনার এবং বিভাগীয় প্রধান সচিবদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। সেই বৈঠকে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন খাদ্য দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ আগরওয়াল। রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘রেশন থেকে কেউ চাল পাবেন, আর কেউ পাবেন না–এটা হতে পারে না। তখন তো লোকে আমাদের ধরবে। আগে গুদামে চাল ঢুকুক তার পর আমরা রেশনের চাল তোলার কথা ভাবব।’
এফসিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, ওডিশা ও ছত্তীসগড় থেকে বাংলায় চাল পাঠানো হচ্ছে। লকডাউনের জন্য শ্রমিকরা কাজে না আসায় রেক বোঝাই করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই এখনও রেক এসে পৌঁছয়নি। তবে সাত-আট দিনের মধ্যে এ রাজ্যে ১০০টির মতো চালের রেক ঢুকবে। ডানকুনি, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ বিভিন্ন জায়গায় রেক থেকে চাল নামানো হবে। তবে জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেছেন, ১০০টি রেকে খুব বেশি হলে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল মিলতে পারে। তা দিয়ে চাহিদার পুরোটা পূরণ হবে না। তার জন্য কম করে ছ’লক্ষ মেট্রিক টন চাল লাগবে।
তবে কি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিলেও চাল পাবেন না রাজ্যবাসী?