অক্সিজেনের কালোবাজারি রুখতে অভিযান কলকাতা পুলিসের
অক্সিজেন সিলিন্ডারের (Oxygen Cylinder) কালোবাজারি (Black Market) রুখতে এবার শহরে তল্লাশি অভিযান শুরু করল কলকাতা পুলিসের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (EB)। হানাদারি চলে বিভিন্ন গোডাউন এবং দোকানে। ভবানীপুর থানা এলাকার হেসাম রোডের একটি দোকান থেকে পাওয়া গিয়েছে ২৫টি অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার। প্রতিটিতেই ছিল ১০ লিটার করে অক্সিজেন। সব মিলিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে মোট ২৫০ লিটার শ্বাসবায়ু। আবার মানিকতলা এলাকায় একটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ইবি’র অফিসাররা অক্সিজেনের ১৫টি খালি সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করেছেন। যা বাজারে বিক্রি করার জন্য রাখা হয়েছিল বলে পুলিস সূত্রে খবর। বিষয়টি নিয়ে ড্রাগ কন্ট্রোলে চিঠি দিয়েছে ইবি।
রাজ্যজুড়ে অক্সিজেনের আকাল অব্যাহত। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় জোগান অত্যন্ত কম। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায়। এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার বেআইনিভাবে মজুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিক্রি করছে চড়া দামে।
ইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব গোডাউনে সাধারণত ভর্তি বা খালি সিলিন্ডার রাখা থাকে, সেই জায়গাগুলিকেই টার্গেট করেছে তারা। এদের সঙ্গে তাল দিচ্ছে গোডাউনের মালিকরা। মানিকতলার যে গোডাউনে অফিসাররা হানা দিয়েছেন, সেখানে অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার মজুত করে রাখা ছিল বলে জানা গিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ৫২ কেজি’র ১৩টি এবং ১৫ কেজি’র দু’টি খালি সিলিন্ডার। মানিকতলা ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও গোডাউনে অক্সিজেন সিলিন্ডারের স্টকও মিলিয়ে দেখেন অফিসাররা। কী দামে বিক্রি হচ্ছে সেই সিলিন্ডার, তাই নিয়ে তথ্য সংগ্রহ চলে।
তদন্তে উঠে এসেছে রীতিমতো চক্র গড়েই এই কারবার চালাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। কোন কোন গোডাউনে খালি বা ভর্তি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত থাকে, সেগুলি চিহ্নিত করছে তারা। এরপর সেখানকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে সেইসব সিলিন্ডার বের করে আনছে। এক-একটি খালি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। এই অসাধু চক্র তা রোগীর পরিবারকে গ্যাস ভরে বিক্রি করছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।
কিন্তু কীভাবে খালি সিলিন্ডারের বিনিময়ে মিলছে ভর্তি সিলিন্ডার? তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, যেখানে ভর্তি সিলিন্ডার মজুত করে রাখা হয়, সেখানে এই খালি সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিমেষে হয়ে যাচ্ছে বদল। সূত্রের খবর, লাইসেন্সপ্রাপ্ত গোডাউন থেকে ভর্তি সিলিন্ডার বের করে আনছে দালাল চক্র। তারা তাদের ডেরায় এগুলি মজুত করে রাখছে বেআইনিভাবে। রোগীর পরিবারের সঙ্গে দরদাম ঠিক হওয়ার পর এই চক্রের লোকজন অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ইবি’র আধিকারিকরা জেনেছেন, এভাবে খালি সিলিন্ডার বিক্রি করা যায় না। এই সংক্রান্ত নিয়ম জানতে ড্রাগ কন্ট্রোলকে চিঠি দিয়েছে ইবি। উত্তর এসে গেলে মানিকতলার ওই গোডাউন মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।