রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বহীনতায় রাজ্যের এই কোভিড পরিস্থিতির মুলে: তৃণমূল

April 26, 2021 | 2 min read

কোভিড পরিস্থিতির এই ভয়াবহতার জন্যে নির্বাচন কমিশনকেই (ECI) দায়ী করল তৃণমূল (TMC)। তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘যখন বাংলায় আট দফায় নির্বাচন ঘোষণা হল, সেইদিনেই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে আবেদন করা হয় যাতে এত দিন ধরে নির্বাচন না হয়। সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি যখন আরও খারাপ হয়, তখনও দলের পক্ষ থেকে শেষ তিন দফার নির্বাচন একসাথে করার কথা বলা হয়েছিল। সেই আবেদনও নাকচ করে দেওয়া হয়।’

এর পর ভ্যাক্সিন (Vaccine) প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ২৪-এ ফেব্রুয়ারী, ২০২১-র চিঠিতে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেন যে রাজ্যগুলি যেন নিজেদের তহবিল থেকে টিকা কিনে বিনামুল্যে তা প্রদান করতে পারে। আজ অবধি কেন্দ্রের কাছ থেকে এর জবাব আসেনি।’

রাজ্যে কোভিডের (COVID19) বাড়বাড়ন্তের জন্যে মোদী-শাহকে দুষে পার্থবাবু বলেন, ‘কলকাতা আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখন পজিটিভিটি রেট বেড়ে ৪৫% থেকে ৫৫% এর মধ্যে, বাংলার অন্যান্য জায়গায় এই হার এখন ২৪%, যা কিনা এই মাসের শুরুতে থাকা ৫% এর তুলনায় অনেকটাই বেশি।

এর কারণ এপ্রিল মাসে, মোদী ও শাহ জুটি বাংলায় ৫০ টি জনসভা করেছেন।’

রাজ্যে কোভিড রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ার খতিয়ানও তুলে ধরেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যখন বাংলায় প্রথম দফার নির্বাচন হয় তখন দৈনিক সংক্রামণের সংখ্যা ছিল ৮১২ এবং মৃত্য-র সংখ্যা ছিল ২ টি। গতকাল, ২৫-এ এপ্রিল, দৈনিক সংক্রামণের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬,০০০ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের।’

মাদ্রাজ হাইকোর্টের কমিশনকে ভর্ৎসনার প্রসঙ্গও এদিন তুলে আনেন তিনি। বলেন, ‘মাদ্রাজ হাই কোর্টের মুখ্য বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন-“ নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা উচিৎ।”’

এরপর তিনি বৈঠকে একথাও পরিষ্কার করেন যে অক্সিজেন সরবরাহ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। এর জন্যে তাদের বিশেষ কমিটিও রয়েছে। দেশে প্রয়োজনের থেকে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন হলেও ব্যাপকহারে বিদেশে রপ্তানির জন্যেই যে এই আকাল সে কথাও জানান তিনি।
পার্থ বাবু জানান, ‘২০২০-র জানুয়ারী থেকে ২০২১-র জানুয়ারীর মধ্যে অক্সিজেন রফতানি ৭৩৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনে ২ লক্ষ মানুষ সংক্রামিত হওয়ার পর, ২২-এ এপ্রিলে ভারী শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’

রাজ্য কেন অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে পারছে না, এদিন তারও হিসেব দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘ অক্টোবার ২০২০-এ মোট ১৬২ টি প্রেসার সুইং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ২০১.৫৮ কোটি টাকা পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ৫০% এখন কাজ করছে না। ১৮-ই এপ্রিল, ২০২১ পর্যন্ত মাত্র ৩৩ টি প্ল্যান্ট চালু আছে।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল সাপ্লাই স্টোরের।’

বাংলা বঞ্চণার শিকার এই অভিযোগে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সাথে বাংলার তুলনা করে মন্ত্রী বলেন, এখন অবধি অক্সিজেন প্ল্যান্টের সংখ্যা বিজেপি শাসিত রাজ্যে- ২১ টি।
বিজেপি বিরোধী শাসিত রাজ্যে- ৮ টি। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে- ৪ টি, বাংলায়-০।’

বিশ্বের ৬০% ভ্যাক্সিন ভারতে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও দেশে ভ্যাক্সিনের আকাল কেন সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন অবধি ভ্যাকসিনের চাহিদা দিনপ্রতি প্রায় ৪০ লক্ষ, তবে ভারত কেবল প্রতিদিন ২০ লাখ উত্পাদন করে। কীভাবে চাহিদা পূরণ হবে?’

কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির ভ্যাক্সিন কেনার ক্ষেত্রে দামের ফারাক নিয়েও এদিন সরব হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পিএম কেয়ারস ফান্ড থেকে ভ্যাক্সিন কেনার জন্যে কেন টাকা দেওয়া হচ্ছে না এদিন সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। যেখানে আমেরিকা, ইউকে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলি বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ঘন্টা বাজিয়ে যে করোনা রোখা যাবে না, একথা স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী কোভিড পরিস্থিতি না সামলে এখানে এসে সভা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#partha chatterjee, #tmc, #covid-19

আরো দেখুন