আরও শক্ত হল কেষ্টর গড়
এসপি বদলে, ভোটের আগের দিন ‘স্পেশাল অফিসার’ পাঠিয়েও অনুব্রত মণ্ডলের গড় অটুট। বরং আরও শক্তপোক্ত হল। গেরুয়া শিবিরের কোনও কৌশলই কাজে এল না। জেলার ১১টি বিধানসভার ১০টিতেই জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। জেলা থেকে সাফ হয়ে গেল বাম-কংগ্রেস। একটি আসন জিতেছে বিজেপি। জয় নিশ্চিত হতেই সবুজ আবিরে ঢেকে যায় বীরভূমের রাস্তা ও আকাশ। ফাটতে শুরু করে বাজি। এমনকী, মহিলারাও জয়ের খুশিতে আবির খেলতে রাস্তায় নেমে পড়েন। রবিবার গণনার শুরু থেকেই নলহাটি, মুরারই ও হাসনে এগতে শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক আসনে তৃণমূলের জয়ের খবর আসতে থাকে। শুরু থেকেই রামপুরহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির (BJP) হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। অবশেষে ৮৪৭৭টি ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চমবারের জন্য জয় নিশ্চিত হতেই তিনি তারাপীঠে মা তারার মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। আশিসবাবু বলেন, মা তারা ও মানুষের আর্শীবাদ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নই আমাকে পঞ্চমবারের জন্য নির্বাচিত করেছে। নলহাটির ফল নিয়েও উৎসাহ ছিল চরমে। এখানে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস দলীয় টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ান। গণনা শেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৫৬ হাজার ৯০০ ভোটে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী তথা পুর চেয়ারম্যান রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিং। মইনুদ্দিন পান মাত্র ২২০০টি ভোটে। এখানে বিজেপি প্রায় ৬০হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। রাজেন্দ্রবাবু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উন্নয়ন আর অনুব্রত মণ্ডলের সাংগঠনিক দক্ষতার আবারও একটি প্রমাণ এই জয়। প্রায় ৯৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন মুরারইয়ের তৃণমূল প্রার্থী মোশারফ হোসেন।
কংগ্রেসের গড় হিসাবে পরিচিত হাসন কেন্দ্রের এবার দখল করল তৃণমূল। বোলপুরে বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রায় ২২ হাজার ২৮০ ভোটে হারালেন তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। মনিরুল ইসলাম লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল দাঁড়িয়ে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। এখানে প্রায় ১৭ হাজার ৯৯৫ ভোটে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ সিনহা। আর নানুরে ৬৬৫০ ভোটে জিতলেন তৃণমূলের বিধানচন্দ্র মাঝি। সিউড়ি, সাঁইথিয়া ও ময়ূরেশ্বর বিধানসভায় জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দুবরাজপুরে বিজেপি প্রার্থী অনুপ সাহা ৩৮৯০ ভোটে জয়ী হন। সিউড়িতে তৃণমূলের বিকাশ রায়চৌধুরী ৭২৭০ ভোটে জয়ী হন। সাঁইথিয়া ও ময়ূরেশ্বরে তৃণমূলের যথাক্রমে নীলাবতী সাহা ১৭ হাজার ও অভিজিৎ রায় প্রায় ১২ হাজার ১০৮ ভোটে জয়ী হন। দলীয় প্রার্থীদের জয়ের খবর আসতেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আবির খেলে উল্লাসে মেতে ওঠেন।
পরাজয় প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহাকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকী, মেসেজেরও উত্তর দেননি। জেলায় বিপুল জয়লাভের পর এদিন অনুব্রতবাবু বলেন, আমি মায়ের দুধ খেয়ে মানুষ হয়েছি। কেষ্টকে আটকানো সোজা নয়। আমি যা বলেছিলাম, তা করে দেখিয়ে দিয়েছি। মহিলারা দায়িত্ব নিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন। একা মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় দল কোমর বেঁধে নেমেছিল। কিন্তু বাংলায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি সাধারণ মানুষ মেনে নেননি।