রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

মমতাকে শায়েস্তা করতে গিয়েই সিপিএম-কংগ্রেসের ভরাডুবি

May 4, 2021 | 2 min read

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) শায়েস্তা করতে গিয়েই সিপিএম-কংগ্রেস (CPIM -Congress)জোটের ভরাডুবি হল। একদা ‘বামেদের দুর্জয় ঘাঁটি’ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমকে এমন ‘ঐতিহাসিক সঙ্কটে’র মধ্যে পড়তে হয়নি। লোকসভায় এবং বিধানসভায় বামের কোনও প্রতিনিধি নেই। তৃণমূল (TMC) নেত্রীকে শিক্ষা দিতে যাওয়া বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটকে বাংলার মানুষ যে এভাবে চরম শিক্ষা দেবেন, সেটা মহম্মদ সেলিম-অধীর চৌধুরীরা ভাবতেও পারেননি। হাতে গোনা দু’চারজনকে বাদ দিলে রাজ্যের প্রায় সব আসনেই সিপিএম প্রার্থীর জামানত জব্দ। এক যুগ আগেও এমনটা কল্পনা করার দুঃসাহস কেউ পেত না। অথচ এবারের নির্বাচনে সেটাই ঘটল। বাংলার বুঝিয়ে দিল, চরম সুবিধাবাদী জোট চায় না।


লোকসভা নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়েছিল, এরাজ্যে প্রধান বিরোধী দল আর সিপিএম নয়, বিজেপি। তারপরেও সিপিএম বিজেপিকে ঠেকানোর চেষ্টা করেনি। উল্টে কংগ্রেস, সিপিএম একযোগে মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছে। তাতে লাভ হয়েছে বিজেপির। বিজেপিকে আটকাতে খোদ তৃণমূল নেত্রীর এক হয়ে লড়াইয়ের প্রস্তাবকে সিপিএম নেতৃত্ব তাঁর ‘দুর্বলতা’ ভেবেছিল। সদম্ভ ঘোষণা, বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্যের দরকার নেই, বামেরাই যথেষ্ট।


বামেরা মুখে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি বললেও আক্রমণের অভিমুখ সর্বদা মমতার বিরুদ্ধেই ছিল। কারণ ক্ষমতায় থাকার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার রাজনীতির মূলে আঘাত হেনেছিলেন মমতাই। সেই রাগ থেকেই তৃণমূলনেত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করাই সিপিএমের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই কারণেই ২০১৬ সালে কংগ্রেসের হাত ধরা। এবার তথাকথিত ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করতেও পিছপা হয়নি। তার পিছনে একটাই উদ্দেশ্য কাজ করেছে, মমতার বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া। তাই বর্ধমান লবির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও মহম্মদ সেলিম, সূর্য মিশ্র, বিমান বসুরা আইএসএফের সঙ্গে জোট করেছেন। ভেবেছিলেন, মুসলিম ভোট কেটে মমতার যাত্রা ভঙ্গ করবেন। তাতেও মমতার ক্ষতি হয়নি, উল্টে বাম মনস্ক বহু শিক্ষিত মানুষ বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।


একদা ‘লালদুর্গ’ দুই বর্ধমান জেলার ২৫টি আসনেই বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। দিল্লির জেএনইউ আন্দোলন খ্যাত ঐশী ঘোষ, এমনকী শিলিগুড়ির অশোক ভট্টাচার্যও জামানত বাঁচাতে পারেননি।


মমতাকে টার্গেট করতে গিয়ে তাঁর জনমুখী প্রকল্পগুলিরও তীব্র বিরোধিতা করেছে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সবুজসাথী সাইকেল, বিনা পয়সার চাল, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো বিশ্বে নজির সৃষ্টিকারী প্রকল্পগুলিরও সমালোচনা করেছে। সবুজসাথী নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে নতুন সাইকেল সারানোর গল্প বলে মজা নিয়েছে। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি, একটা সাইকেলের জন্যই অভাবী পরিবারের বহু মেয়ের পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যেত। মমতা সাইকেল দিয়ে খুলে দিয়েছেন উচ্চশিক্ষার দরজা।


সিপিএম নেতৃত্ব কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্পকে কটাক্ষ করে বলেছে, ‘ভাতা নয়, চাকরি চাই।’ ভেবেছিল, এভাবেই যুবসমাজকে কাছে টানবে। সিপিএম নেতারা খবর নিলে জানতে পারবেন, ২মে হাজার হাজার কিশোরী টিভির সামনে বসেছিল। কেন জানেন? বাংলার ভবিষ্যৎ কার হাতে যাচ্ছে, তা জানার জন্য। তারা ভোটার নয়। ইভিএমে বোতম টিপে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনার অধিকার তারা পায়নি। তবুও তারা কায়মনবাক্যে ‘দিদি’র প্রত্যাবর্তন প্রার্থনা করছিল। কারণ দিদি না ফিরলে বন্ধ হয়ে যেত তাদের কন্যাশ্রীর টাকা।
বিনা পয়সার চাল নিয়েও কম কটাক্ষ হয়নি। কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি একযোগে কটাক্ষ করেছে, ‘ভিক্ষে চাই না, কাজ চাই। দয়ায় নয়, অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই।’ বিরোধী দলের নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে গরিবের আঁতে ঘা দিয়েছেন। তাঁরা ভেবেছেন, বিনা পয়সায় দেওয়া মানেই ভিক্ষে। অক্সিজেনও বিনা পয়সায় পাওয়া যায়। তা ভিক্ষে নয়, জীবনদায়ী। গরিবের হেঁশেলে মমতার বিনা পয়সার চাল অক্সিজেনের মতোই। সেটা বুঝতে না পারাটাই সিপিএম নেতাদের মস্ত ভুল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Congress, #bjp, #Cpim

আরো দেখুন