করোনার ভ্রুকুটি সত্ত্বেও বিপুল বিদেশী বিনিয়োগ আসছে বাংলায়
করোনা (COVID19) সংক্রমণ ও লকডাউনে গত বছর গোটা বিশ্বেই মন্দা ছিল বাজার। ব্যবসা মার খেয়েছিল তো বটেই, লগ্নিও হয়নি সেভাবে। এই ঝিমিয়ে পড়া পরিস্থিতিতেও নজিরবিহীনভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে রাজ্যে। গত বছরের গোড়া থেকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলায় যে পরিমাণ বিদেশি লগ্নি এসেছে, তা তার আগের বছরের ওই সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। রাজ্য সরকার নয়, পরিসংখ্যান দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্র নিজেই।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, গত বছর এরাজ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির অঙ্ক ছিল ৩ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। সেই সময় করোনা বিশ্বের বাজারে থাবা বসায়নি। আর্থিক কার্যকলাপ স্বাভাবিক ছিল ভারতেও। তখন এরাজ্যে যে অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, লকডাউন ও পরবর্তী সময়ে তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে। হিসেব এখানেই শেষ নয়। কারণ, কেন্দ্র বলছে, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই ছিল ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার। এর থেকেই স্পষ্ট, প্রায় বছর দু’য়েক আগে বছরভর চেষ্টা চালিয়ে যে বিনিয়োগ বিদেশ থেকে বাংলার মাটিতে এসেছিল, এবার তা প্রায় ২.৮ গুণ বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রক বলছে, এই সময়ের নিরিখে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে দেশে নবম স্থানে রয়েছে রাজ্য। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক।
শিল্পায়ন নিয়ে প্রায়শই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে। বড় বিনিয়োগ না আসার খোঁচা সামলাতে হয় তাদের। কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য ছোট ও মাঝারি শিল্পের জুড়ি নেই, তা মানেন সকলে। রাজ্য সরকারও সেই ছোট শিল্পকেই পাখির চোখ করেছে। শিল্প দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এরাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সেই ছোট বা মাঝারি শিল্পের হাত ধরেই।
করোনা ও লকডাউনের (Lockdown) মধ্যে গতবার ওই সাফল্য এল কী করে? শিল্পমহলের বক্তব্য, বিদেশি লগ্নি কখনও রাতারাতি আসে না। তার জন্য জমি তৈরি করা দরকার। যে প্রশাসনের ভাবমূর্তি যত ভালো, শিল্পায়নের নীতি যত আকর্ষণীয়, লগ্নির গা থেকে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার তৎপরতা যত বেশি, বিনিয়োগও সেখানে তত বেশি। বিশ্ব ব্যাঙ্কের উদ্যোগে যে ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’ প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় সামনের সারিতে উঠে এসেছে বাংলা। তা বিনিয়োগ টানতে সুবিধা করে দিয়েছে বলেই মনে করছে শিল্পমহল। পাশাপাশি রাজ্য সরকার যে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে, তারও ফলশ্রুতি এই সাফল্য, বলছেন অনেকে।