করোনা কালে মেয়াদ বৃদ্ধি হবে ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ এর
সংক্রমণের জেরে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি গোটা রাজ্যে। এমন এক পরিস্থিতিতে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মারণ সংক্রমণকে বধ করাই এখন তাঁর প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য। তাই মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণের পরেই একটি বড় সিদ্ধান্ত নিল নয়া সরকার। খুব সম্ভবত এবার নতুন করে বাজেট পেশ করবেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra)। সূত্রের দাবি, যে নথির উপর নির্বাচনের আগে ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পাশ হয়েছিল, পরবর্তী ৮ মাসের জন্য সেটিকেই বিধানসভায় অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হতে পারে। জোর দেওয়া হবে দুয়ারে রেশন, কৃষকদের ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহায়তা এবং বাড়ির মহিলাদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার উপর। সেই মতো বরাদ্দ ব্যবস্থা করা হবে। আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত রাজ্য সরকারের ৩৩ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’-এ (Vote on Account) অনুমোদিত হয়ে রয়েছে।
২০১১ এবং ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর নতুন করে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তবে এবার বিশ্বব্যাপী মহামারী এবং রাজ্যজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই বিধানসভার অধিবেশন ডেকে ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’কে পূর্ণাঙ্গ বাজেট হিসেবে গণ্য করার অনুমোদন নেওয়া হবে। গত ১০ মে নবগঠিত রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার এ প্রসঙ্গে অর্থদপ্তরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি এই সঙ্কটময় মুহূর্তে রাজ্যের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো নয়। ভোট অন অ্যাকাউন্টে প্রস্তাবিত আয় এখনও কার্যত তলানিতে। তাই নতুন করে বাজেট পেশ না করেই পরবর্তী ৮ মাসের ব্যয় বরাদ্দের অনুমোদনের জন্য তৈরি হচ্ছি আমরা।’ নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের বছরে সরকার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে ৩৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন নেওয়া হয় ভোট অন অ্যাকাউন্টে। যদিও প্রশাসনিকভাবে প্রতিটি দপ্তরকে এই চার মাসে বরাদ্দ অর্থের ২৫% খরচের অনুমোদন দিয়েছে নবান্ন। বাকি ৮ শতাংশ টাকা সরকার হাতে রেখে দেয়। করোনা পরিস্থিতি এবং রাজ্যের কোষাগারের এই নিম্নমুখী চিত্র দেখে আগামী ৮ মাসে দপ্তরগুলিকে সর্বোচ্চ ৫০-৭০ শতাংশ ব্যয় করার অনুমোদন দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থদপ্তরের আরেক আধিকারিক বলেন, বাজেট পাশ করার অর্থ আইনসভায় ১০০ শতাংশ টাকা খরচের অনুমোদন। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কোন দপ্তরকেই তার অনুমোদন দেওয়া হয় না। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড বলছে সবমিলিয়ে ৭৫ শতাংশ খরচের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তারপর রাজ্যের আয় সন্তোষজনক হলে বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কিছু দপ্তরকে আরও অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন মেলে। কিন্তু করোনার জেরে গত বছরও দপ্তরগুলিকে টাকা খরচের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ বছরও তা করা হতে পারে।
নবান্ন সূত্রের দাবি, অপ্রয়োজনীয় কোন খরচ না করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা রুখতে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সরকারি পরিকাঠামো এবং টিকায় খরচের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশাসনিক কিংবা দপ্তরের অন্যান্য খরচে রাশ টানতেই নতুন করে বাজেট পেশে সরকার যাচ্ছে না।