চলতি অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে শীর্ষে থাকা বাংলাকে এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র
গ্রামীণ মানুষের রোজগার নিশ্চিত করতে ১০০ দিনের কাজই সরকারের অন্যতম হাতিয়ার। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পে এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ। লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাওয়াকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার। অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে গত আর্থিক বছরে ৪১ কোটি ২৫ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে রাজ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এত ভালো পারফরম্যান্স থাকা সত্ত্বেও ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে রাজ্যের জন্য মাত্র ২২ কোটি শ্রমদিবস বরাদ্দ করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন অর্থবর্ষ। বসে থাকেনি পঞ্চায়েত দপ্তর। ১০০ দিনের কাজ পুরোদমে চলছে। দেড় মাস অতিক্রান্ত। অথচ এখনও এই খাতে রাজ্যের ঘরে এক টাকাও পাঠায়নি কেন্দ্র।
তবে তার জন্য থামতে রাজি নন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শপথ নিয়েই কাজে আরও গতি আনতে উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার দপ্তরের সব পাইলট প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সুব্রতবাবু বলেন, ‘গত বছর আমরা সর্বকালীন রেকর্ড করেছি। গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চাবিকাঠি হল এই ১০০ দিনের কাজ। এটা একটা অধিকার। আমাদের শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা যা-ই দেওয়া হোক, তা কয়েক মাসের মধ্যে ছাপিয়ে যায়। গত দু’মাস ভোট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার অফিসারদের থেকে রিপোর্ট নিয়ে টাকা দেওয়া সহ সব বিষয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে দরবার করা হবে।’ প্রতিটি প্রকল্পের কাজই জোরকদমে করার জন্য পঞ্চায়েতগুলিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রবীণ পঞ্চায়েতমন্ত্রী। এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি এই দপ্তরের দায়িত্বে।
গত বছর ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার এক মাস পরেই ১০০ দিনের কাজকে ছাড় দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে অনেক পরিযায়ী শ্রমিককে ১০০ দিনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে, শ্রমদিবস তৈরিতে অনেকটা এগিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ। গত আর্থিক বছরে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ২৯ হাজার মানুষ ১০০ দিনের কাজে যুক্ত ছিলেন। ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪৩৯ ধরনের কাজ হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। লকডাউনের মধ্যে কাজের গতি নিয়ে সংশয়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রকের অফিসাররা বিভিন্ন কাজের অডিট করেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কাজ দেখতে রাজ্যেও চলে আসে। অনেক পরীক্ষার পর শেষপর্যন্ত অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার অনুমোদন মেলে। সেই মতো টাকাও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। গত অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে মোট ১১ হাজার ১০১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে রাজ্য। যার মধ্যে মজুরি বাবদ ৯ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা এবং ১ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা সরঞ্জাম কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৫৮ কোটি ২১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা।
গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক করেছে কেন্দ্র। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই খাতে রাজ্যের কোষাগারে কোনও টাকা আসেনি। এই ইস্যুতে নীরব থেকে যেভাবে ভোটের হিংসা দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বাংলায় আসছে, তাতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ নবান্ন।