জঙ্গলে ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ দম্পতির সহায় একদল মুসলিম যুবক
জঙ্গলে থাকেন এক ব্রাহ্মণ আর এক ব্রাহ্মণী। চারদিকে ঝোপঝাড়। বেজি, শিয়াল আর সাপের উৎপাত। সেখানে টানা দিন স্রেফ শুকনো মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। পুজোপাঠ বন্ধ। নেই দক্ষিণাও। এই অবস্থায় প্রতিবেশীরা পাশে দাঁড়ায়নি, আসেনি প্রশাসনের কেউ। তবে ব্রাহ্মণ দম্পতির দিকে হাত বাড়িয়েছেন এলাকার কিছু মুসলিম যুবক। জঙ্গলে ওঁরাই ঈশ্বর, ওঁরাই আল্লাহ। ওঁরাই চাঁদা তুলে কিনে দিয়েছেন চাল-ডাল। কিন্তু সেটাও ফুরিয়ে গেছে।
ভাঙড়ের কাশীপুর বাজার থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাঙালবেড়ের আমবাগান। বাগানের পাশে বড় পুকুর। ঘোষপাড়া আর মোল্লাপাড়ার মাঝখানে আমবাগান আর ধানখেত দিয়ে ঘেরা দিঘির মতো বিশাল পুকুর। সেখানেই চট, বস্তা, প্লাস্টিক দিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পূর্ণেন্দুশেখর মুখোপাধ্যায় ও ললিতাবালা মুখোপাধ্যায়ের। বৃদ্ধ আশি পেরিয়েছেন। বৃদ্ধাও পঁচাত্তর ছুঁই ছুঁই। তিনি বাতের ব্যথায় কাবু। গত বছর ডেঙ্গিতে ভুগে শরীর অর্ধেক হয়ে গেছে। পূর্ণেন্দুর দৃষ্টি গেছে অনেকদিন আগে। চোখে ছানি। ভালো দেখতে পান না।
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ঘটনার কথা শুনেছেন ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও কৌশিককুমার মাইতি। তিনি বলেন, ‘ওঁদের দুরবস্থার কথা জানা ছিল না। চাল-ডাল পাঠাচ্ছি। ভাতের অভাব হবে না ওঁদের।’
কাশীপুরের যুবক জিয়াউল মোল্লা, আজান আলি মুক্তি, আবুতালেব গায়েন, মোফিজুল মোল্লারা সবাই গাড়ি শ্রমিক। লকডাউনের জেরে ট্রাকের চাকা বন্ধ। আমবাগানে মুড়ি খেতে খেতে ওই কুঁড়েঘর দেখতে পান। ঘরে উঁকি দিয়ে চোখে জল আসে তাঁদের। জিয়ারুল নিজে পাঁচশো টাকা দেন বৃদ্ধের হাতে। ডাক পড়ে অতনু, শঙ্কর, সুকুমার-সহ আরও কয়েকজন বন্ধুর। তাঁরাই এগারোশো টাকা চাঁদা তুলে দেন ওই দম্পতির হাতে।
যখন নিজের আত্মীয়স্বজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তখন ভিন্ন ধর্মের যুবকরা যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাতে আপ্লুত ওই দম্পতি। জিয়াউল মোল্লা বলেন, ‘এখন সব মানুষ কষ্টের মধ্যে আছেন, ওঁদের অভাব দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর জন্য।‘
অদৃশ্য ভাইরাস বুঝিয়েছে, চাল-ডালের ধর্ম নেই। ছিলও না কোনও দিন।