ত্রুটিতে ভরা? গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন সিবিআইয়ের অন্দরমহলেই
নারদ কাণ্ডে মন্ত্রী ও বিধায়কদের গ্রেপ্তার নিয়ে সিবিআইয়ের অন্দর মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তড়িঘড়ি কোনও নোটিস ছাড়াই কীভাবে তাঁদের তুলে আনা হল, সোমবার খোদ সিবিআই দপ্তরেই এনিয়ে দিনভর চলল চর্চা। পাশাপাশি চার্জশিট দেওয়ার ঘটনায় তাদের অসংখ্য ভুলও সামনে চলে এসেছে। ইলেকট্রনিক্স গেজেটের নথি ছাড়াই চার্জশিট দেওয়ায় এই মামলা শেষ পর্যন্ত কতদূর দাঁড়াবে, এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে অফিসার মহলে।
রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও এক বিধায়ক সহ চারজনকে সিবিআই গ্রেপ্তার করার পর রাজ্য-রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের একাংশের প্রশ্ন, এতদিন চুপচাপ থাকার পর হঠাৎ কেন এই মামলা নিয়ে উদ্যোগী হল দপ্তর? এর পিছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন তাঁরা। বিশেষত কোনও নোটিস ছাড়াই গ্রেপ্তার করায় এই সম্ভাবনা আরও জোড়ালো হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, তদন্তকারী অফিসাররা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ব্যাকরণের প্রাথমিক পাঠটুকু মানেননি। তাঁদের প্রশ্ন, ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হল। অথচ তাঁদের ‘অ্যারেস্ট মেমো’ দেওয়া হল নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসার পর। নিয়ম বলছে, কাউকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করলে সেখানেই অ্যারেস্ট মেমো ইস্যু করতে হয়। তাঁদের গ্রেপ্তারের আগে আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে এলে এই সমালোচনার মুখে পড়তে হতো না। তাছাড়া কোনও মামলার ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা কাউকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে বা না চাইলে, তার কারণ আদালতকে জানাতে হয়। অফিসাররা সেই নিয়ম মানেননি। যদি গ্রেপ্তার করতেই হয়, তাহলে চার বছর পর কেন? যদিও অফিসারদের একাংশের যুক্তি, বিধানসভার অধ্যক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় গোটা প্রক্রিয়া আটকে ছিল।
সাধারণত, কোনও অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে কিংবা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থাকলে গ্রেপ্তার করা জরুরি হয়। কিন্তু যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। যখনই ডাকা হয়েছে, তখনই তাঁরা হাজিরা দিয়েছেন। এমনকী, তাঁরা প্রভাব খাটানোরও চেষ্টা করেননি। তদন্তকারী অফিসারকে ভয় দেখানো বা প্রভাবিত করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি তাঁরা। তাছাড়া সেই ফুটেজের সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তাসত্ত্বেও সিবিআই অফিসাররা চারজনকে গ্রেপ্তার করলেন কী করে, সেই ধন্দ থেকেই গিয়েছে।
ইলেকট্রনিক গেজেটের রিপোর্ট ছাড়াই চার্জশিট জমা পড়েছে। সেটি এখনও ঝুলে রয়েছে। ম্যাথু প্রথমে জানিয়েছিলেন, আই ফোনে স্টিং অপারেশন করেছিলেন। পরে তিনি সিবিআইকে জানান, সেই ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে। পরে আবার বয়ান বদল করে বলেন, আইফোনের মাইক্রো ফোন জ্যাক সকেটের মধ্যে বসিয়ে তিনি স্টিং অপারেশন করেছিলেন। এই নিয়ে অ্যাপেল-এর কাছে তথ্য চেয়েছে সিবিআই। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি। অ্যাপেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এই ফুটেজ নির্ভরযোগ্য কি না? তারা এখনও সেই উত্তর দেয়নি। ফুটেজ রহস্যের সমাধান না করে সিবিআই চার্জশিট জমা দেওয়ায় এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্ধিহান অফিসারদের একাংশ। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, সমস্ত পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ, নথি এবং ভয়েস স্যাম্পল-এর ভিত্তিতেই চার্জশিট জমা পড়েছে।