প্রতিহিংসার রাজনীতিতে করোনাকালে বঞ্চিত মানুষ, সরব বিশিষ্টরা

বিচার হোক না, কিন্তু তার একটা নিয়ম ও সময়জ্ঞান তো থাকবে।

May 20, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

এই মুহূর্তে কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখন মানুষের পাশে থেকে কাজ করার সময়। এমন অবস্থায় ফিরহাদ হাকিম কলকাতা তথা গোটা রাজ্যেই টিকাকরণ প্রক্রিয়ার কাজ খুব দায়িত্বের সঙ্গে সামলাচ্ছিলেন। মদন মিত্র অনেককে ভর্তি করছিলেন হাসপাতালে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও সরকারের অন্যতম সৈনিক। কেউ অপরাধ করেছেন কি না, তা অবশ্যই আইন আদালত বলবে। কিন্তু এঁরা তো কেউ ফেরার হয়ে যাচ্ছিলেন না! বিচার হোক না, কিন্তু তার একটা নিয়ম ও সময়জ্ঞান তো থাকবে। এই সময়টাকেই বেছে নেওয়া হল কেন? রোগের সঙ্গে লড়াই থমকে গেল। বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হল মানুষকে।— শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক

সকলেই বুঝতে পারছেন, এর ভিতর সুস্পষ্ট একটা স্কিম রয়েছে। প্রথমত, ভোট পরবর্তী হিংসা আমাদের রাজ্যে নতুন কিছু নয়। বামফ্রন্ট জমানাতেও ঘটেছে। যখন জে পি নাড্ডা ভোট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে দেশভাগের তুলনা টানলেন, তখনই ঝুলি থেকে বিড়ালটা বেরিয়ে এল। দ্বিতীয়ত, রাজ্যপালের কতটা সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, সেই তর্কের মধ্যে না গিয়ে এটুকু বলতে পারি, তঁাকে শুধুই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে কেন? একবারও কি বলছেন, তৃণমূলের কেউ আক্রান্ত? তৃতীয়ত তথা শেষ পয়েন্ট, হঠাৎ করে নারদ কেলেঙ্কারিতে এত বছর পর ধরপাকড় শুরু। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু সময়টা এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। এমন একটা সময়ে সব ঘেঁটে দিতে এই গ্রেপ্তারি। আসলে এ রাজ্যের ভোটের যে ফল, তার প্রভাব শুধু ভারতের অন্যান্য রাজ্যেই পড়ছে না, বিশ্বের দরবারে সেই বার্তা গিয়েছে—যা বিজেপির পক্ষে নেতিবাচক। সিবিআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে বিজেপি নেতারা যতই দাবি করুন, সবাই সব বুঝছে।— কৌশিক সেন, অভিনেতা

কোভিডের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মন্ত্রী ও পুর প্রশাসকের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তাঁদের নেতৃত্বেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাতে হবে। কিন্তু বিজেপি এবং সিবিআই তা করতে দিতে চাইছে না। বিধানসভা ভোটে গো-হারা হেরে এখন তারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নোংরা খেলায় নেমেছে। এর থেকে ভয়ঙ্কর অন্যায় আর কিছুই হতে পারে না। আট দফায় ভোটের মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের। ‘টিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ বাংলার মানুষকে পরিষেবা দিতে চাইছে। সেই প্রচেষ্টায় জল ঢালছে বিজেপি। আর রাজ্যপাল? না বলাই ভালো।— সনাতন দিন্দা, শিল্পী

যেখানে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো কোভিড নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ… গঙ্গায় ভেসে যাচ্ছে লাশ, শ্মশানে ও হাসপাতালে জায়গা নেই, সেখানে বাংলা অনেকটাই সফল। সিবিআই কেন্দ্রের নির্দেশে অন্যায়ভাবে যঁাদের গ্রেপ্তার করল, তাঁরা দিনরাত এক করে কাজ করছিলেন কোভিড নিয়ন্ত্রণে। সেই কাজ ব্যাহত হল। রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করল কঠোর বিধি চলাকালীন এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। প্রশ্ন, এই চার নেতা কি নজিরবিহীন ক্রাইম করেছেন? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, নজিরবিহীন ক্রাইম ছাড়া কোভিড কালে কাউকে জেলে পাঠানো যাবে না। তাহলে কোন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বাংলাকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দিল কেন্দ্র ও তার সিবিআই?— কাবেরী রায়চৌধুরী, সাহিত্যিক

গ্রেপ্তার, জামিন, স্থগিতাদেশ—তাও এই মহামারীর মধ্যে! এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়া আর কী? কাতারে কাতারে মানুষ মরছে, তখন গ্রেপ্তারির রাজনীতি? বাংলার মানুষ হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ভরসা শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। গিনিপিগের মতো আমাদের নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। ভ্যাকসিন নিয়েই বা কী হচ্ছে! এর থেকে বড় সার্কাস হয়? অভাবনীয় পরিস্থিতি। মানুষ এখানে এগিয়ে আসছেন, রাস্তায় নামছেন জনপ্রতিনিধি, রেড ভলান্টিয়ার্সরা। আর মোদিজি? মানুষের জন্য ভাবতে না পারলে তাঁর উচিত এখনই পদত্যাগ করা।— দেবলীনা দত্ত, অভিনেত্রী

তিনদিন ধরে যা চলছে, মেনে নিতে পারছি না। সাত বছর আগের ইস্যু নিয়ে এখনই নড়েচড়ে বসতে হল! করোনার এই দুঃসময়ে ববি হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্রদের গ্রেপ্তারি উচিত হয়নি। সবাই বুঝতে পারছে, প্রতিহিংসা মেটানোর জন্যই এই পথ বেছেছে বিজেপি। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ালে এই বঞ্চনার জবাব আবার দেবে বাংলার মানুষ।— প্রশান্ত ব্যানার্জি, প্রাক্তন ফুটবলার

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen