তলানিতে ভাবমূর্তি, পুনরুদ্ধারে কান্না মোদির, কটাক্ষের বন্যা
‘দিদি ও দিদি…! একুশের বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) মুখে এই সংলাপ রাতারাতি হিট করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করে মোদির এহেন ‘সম্বোধন’ ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। মোদির এই ডাকে আদতে তৃণমূল সুপ্রিমোকে অপমান করা হয়েছে বলে সোচ্চার হয়েছিল জোড়াফুল শিবির। একুশের যুদ্ধ শেষ। একুশের রায়ে মমতা বাহিনীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছে মোদিবাহিনী। এরপরই মোদির এই ‘হিট’ সংলাপ ঠাট্টার খোরাক হয়েছে নেট দুনিয়ায়। করোনা আবহে শুক্রবার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন মোদি। আর এ দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে তাঁরই সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘দিদি ও দিদি’-কে নিয়ে সোচ্চার হলেন নেটাগরিকরা।
এ নিয়ে নেটিজেনদের কেউ কেউ লিখেছেন, ‘নির্লজ্জ, দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে দিদি ও দিদি, আর এখন কুম্ভীরাশ্রু’। আবার কেউ লিখেছেন, ‘ড্রামা কিং হিসেবে অস্কার পেতে পারেন উনি’। অন্য এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘আজকের পারফরম্যান্সের পর দিদি ও দিদি…সেরা ড্রামা হিসেবে অস্কার পুরস্কার পাচ্ছেন?’ টুইটারে এক নেটাগরিক আবার এও লিখেছেন, ‘মোদি ভাল রাজনীতিক নন, উনি ভাল অভিনেতা’। এক নেটিজেন লিখেছেন,’যখন করোনা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছে ছিল, তখন দিদি ও দিদি করছিলেন, আর যখন করোনায় মৃত্যু হচ্ছে, তখন কুমীরের কান্না কাঁদছেন’। এ নিয়ে টুইটারে আবারও ট্রেন্ড করল ‘দিদি ও দিদি’।
উল্লেখ্য, দেশে করোনা পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি সরকার। এমনকী, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (PM Narendra Modi) সমালোচিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা। ভারতীয় ও মার্কিন সংস্থার সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, মোদির জনপ্রিয়তা হু হু করে নেমেছে।
এদিকে, নরেন্দ্র মোদির সেই ‘দিদি ও দিদি’ সংলাপের কথা ভেবে এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কিছু উগ্র বিজেপি সমর্থকের হাততালি ছাড়া যে কিছুই দিতে পারল না মোদির ‘দিদি ও দিদি’ হাঁক! সভায় হাততালি জুটলেও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদির সেই ডাক কানে বেজেছিল বিজেপিরও বহু নেতা-নেত্রীর। মনে কু-ও ডেকেছিল। কিন্তু, বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধতে যাবে কে! রাজ্য বিজেপির কোন নেতার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে মোদির চোখে চোখ রেখে বলবেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এইভাবে সম্বোধন বঙ্গ-সমাজ ভালো ভাবে নিচ্ছে না। না, কেউ প্রধানমন্ত্রীর কানে কানে সে কথা বলেননি। ফলে ভোটের হাওয়া যত তেতেছে, মোদিও তত বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিটি বক্তৃতায় কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর তিনি হাঁক পাড়তেন, ‘দিদি ও দিদি’।
টিভিতে মোদির এহেন সম্বোধন শুনে মনে মনে হয়তো হাসতেন তৃণমূলনেত্রী। কারণ, বাংলার রাজনৈতিক পরিভাষা তাঁর গুলে খাওয়া। তিনি বিলক্ষণ জানেন, রাজ্যের মানুষ কোন কথায় কীভাবে ‘রিঅ্যাক্ট’ করে। প্রধানমন্ত্রী যে ভঙ্গিমায় নির্বাচনী জনসভা থেকে ‘দিদি ও দিদি’ বলে চলেছেন, তা শেষমেশ যে বিজেপির বিরুদ্ধেই যাবে সেটা সম্ভবত তখনই বুঝে গিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাই মোদির পা থেকে বল কেড়ে তিনি কাউন্টার অ্যাটাকে ছুটেছিলেন বিজেপির গোল লক্ষ্য করে। তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করোনোই শুধু নয়, মোদির ওই হাঁককে ‘টোন-টিটকিরি’ ও ‘নারীবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছিলেন ‘দিদি’র দলের নেতারা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিন্দার ঝড় উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর হাঁক পাড়ার স্টাইল নিয়ে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রাজ্য বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা-নেত্রী বার্তা পাঠিয়েছিলেন দিল্লিতে। মোদির ডাকে যে মমতার পালেই সহানুভূতির হাওয়া লাগছে, সেটা ঠারেঠোরে প্রধানমন্ত্রীর কানে তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন দূত মারফত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ তখন বাংলায় দু’শো আসনে জেতার স্বপ্নে বিভোর। বাংলার কোন বিজেপি নেতা কী বলছেন, তাতে থোড়াই কিছু এসে যায় তাঁদের। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘আমাদের কোনও পরামর্শই দিল্লির নেতারা কানে তোলেননি। নিজেরা যা ভালো বুঝেছেন, সেটাই করে গিয়েছেন। এখন তো সব দিল্লি পালিয়েছেন। ওঁদের কৃতকর্মের ফল আমাদের ভুগতে হচ্ছে।’ দলের এক মহিলা নেত্রীর কথায়, ‘মহা মুশকিলে পড়েছি। বাড়ি থেকে বের হতেই অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি তৃণমূলের ছেলেগুলি আমাকে দেখে হাঁক পাড়ল- দিদি ও দিদি…।’