করোনা আবহেও বেআইনি নির্মাণে ১ কোটির বেশি জরিমানা আদায় কলকাতা পুরসভার
করোনা আবহেও শহরে বেআইনি নির্মাণ (Illegal Construction) মামলায় রেকর্ড পরিমাণ জরিমানার টাকা জমা পড়ল কলকাতা পুর আদালতে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গত চার মাসে জরিমানার টাকা জমা পড়ে মোট ১ কোটি ৬ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। আদালতের তরফে ওই টাকা ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) কোষাগারে। এই আদালতের সরকারি আইনজীবীদের বক্তব্য, এর আগে এত বিপুল অঙ্কের জরিমানার টাকা জমা পড়েনি কলকাতা পুর আদালতে। সেদিক থেকে এই ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন এই কোর্টের প্রবীণ সরকারি আইনজীবী পরিমলকুমার ঘোষ। তাঁর কথায় আদালত কড়া পদক্ষেপ নেওয়াতেই এটা সম্ভব হয়েছে। কোর্ট সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শুধুমাত্র পুর আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপকুমার অধিকারীর এজলাসেই জমা পড়ে মোট ৯১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। বাকি টাকা জমা পড়ে এই পুর আদালতেরই অন্য তিনটি এজলাসে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বেআইনি নির্মাণ মামলায় জরিমানার টাকা জমা পড়ে মোট ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে জমা পড়ে ১৩ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। মার্চে সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৭ লক্ষ ১৪ হাজার টাকায়। সেই রেকর্ড ভেঙে গিয়ে এপ্রিল মাসে জমা পড়ে মোট ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
২০১৫ সাল থেকে গত ২০২০ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুর আদালত থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেখান থেকেও জরিমানা আদায়ের একটা ছবি স্পষ্ট হয়। সেসব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে চলতি বছরে প্রথম চার মাসেই। কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলায় ২০১৫ সালে জরিমানার পরিমাণ ছিল ৩০ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে জমা পড়ে ৩২ লক্ষ হাজার ৩৩ টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ২৫ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে পুর আদালতে জমা পড়ে ৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৩ টাকা। ওই বছরেই জুলাই থেকে ডিসেম্বর মধ্যে জমা পড়ে ১৪ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটা লাফিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৯০ লক্ষ ৭২ হাজার টাকায়। ২০২০ সালে ওই আর্থিক জরিমানার টাকার পরিমাণ ছিল মোট ৪১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা।
চলতি বছরে গত চার মাসে এই বিপুল অঙ্কের জরিমানার টাকা জমা পড়ার এই সাফল্যের কারণটাই বা কি? সরকারি আইনজীবীদের একাংশ জানান, প্রথমত, বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত জমে থাকা মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি। দ্বিতীয়ত, আদালত কড়া মনোভাব নেওয়ায় পুলিস দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশ করায় মামলার শুনানিও দ্রুত শুরু হচ্ছে। তৃতীয়ত, জরিমানার টাকা জমা না দিলে জেলে যেতে হবে, এই ভয়ে বহু দোষী সাব্যস্ত প্রোমোটার ও বাড়ির মালিক তড়িঘড়ি আদালতে জরিমানার টাকা জমা দিতে বাধ্য হন। চতুর্থত, বিভিন্ন গাফিলতিতে যে সমস্ত মামলাগুলি দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়েছিল, সেক্ষেত্রে সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট কড়া পদক্ষেপ নেওয়াতেই সেই বকেয়া মামলা গত কয়েক বছরে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। আর এ সমস্ত কারণেই চলতি বছরে গত চার মাসেই আদালতের হস্তক্ষেপে রেকর্ড তৈরি হয়। এটা একটা ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা বলেই মনে করেন শহরের প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশ।