বাইকে করে ছিটমহলে ত্রাণ পৌঁছবেন ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’
লকডাউনে এ বার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দিনহাটার ছিটমহলে ত্রাণ পৌঁছে দেবেন ডুয়ার্সের ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ করিমুল হক। গত এক দশক ধরে রাত বিরেতে রোগীদের নিজের বাইকে করে জলপাইগুড়ি কিংবা মালবাজার হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে গোটা দেশেই এখন পরিচিত নাম তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর এই নিরলস সেবার জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারও দিয়েছে। লকডাউনে দিনহাটার ছিটমহলের বাসিন্দাদের কষ্টকর জীবনের কথা জানতে পেরে করিমুল হককে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন হাওড়ার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী ইকবাল হাসান কাজি। ব্যাঙ্ক মারফত এক লক্ষ টাকাও পাঠিয়েছেন তিনি।
সোমবার কোচবিহার জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলেই করিমুল গাড়িতে করে সেই ত্রাণ পৌঁছে দিতে চান দিনহাটার বড় শৌলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছিটমহলে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিনি এই ব্যাপারে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। করিমুল বলেন, ‘কোচবিহার জেলা প্রশাসন আমায় ১৯ এপ্রিলের পর ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। অনুমতি পেলে সোমবারই ত্রাণ পৌঁছে দিতে চাই।’
ডুয়ার্সের ক্রান্তি থানার অন্তর্গত রাজাডাঙার বাসিন্দা করিমুলের সঙ্গে ইকবাল হাসান কাজির পরিচয় হয় ইন্টারনেটে। করিমুলের সমাজসেবার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে পড়ে ইকবাল যোগাযোগ করেন। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর করিমুলকে দেখে অনুপ্রাণিত ওই কুয়েত প্রবাসী এ রাজ্যে ত্রাণ বিলিতে নেমে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক লক্ষ টাকা দিয়েছেন। হাওড়ার বাগনানের প্রাসাদোপম বাড়িও তিনি কোয়ারান্টিন সেন্টার হিসাবে ব্যবহারের জন্য রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে চান।
আদ্যন্ত ডুয়ার্সের বাসিন্দা করিমুল নিজে কখনও দিনহাটায় যাননি। ছিটমহল সম্পর্কেও তাঁর ভাল ধারণা নেই। কিন্তু মানুষ বিপদে পড়লে তিনি কী করে চুপ করে বসে থাকেন। লকডাউন শুরুর পর ক্রান্তি এলাকার বাসিন্দারা হাসপাতালে যেতে পারছেন না। সামান্য জ্বর, কিংবা সর্দি হলেই সকলে ছুটে আসছেন তাঁরই পরামর্শ নিতে। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সহায়তায় সেই পরামর্শ দিচ্ছেনও তিনি। এমনকী, রোগীদের রক্তচাপ এবং সুগারও মেপে দিচ্ছেন। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে হাসপাতালেও পৌঁছে দিচ্ছেন।
লকডাউনে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নিজের দুই ছেলে আশানুল আর রাজেশকেও সমাজসেবার কাজে সামিল করেছেন পদ্মশ্রী প্রাপক। প্রতিদিন তিন জন মিলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ডুয়ার্সের এই অ্যাম্বুল্যান্স দাদা বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকায় থাকি বলেই চিকিৎসকেরা আমায় রক্তচাপ থেকে সুগার মাপা শিখিয়ে দিয়েছেন। বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু আমি দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছি না। সকাল থেকে বাড়িতে রোগীর ভিড়।
তবে গোটা দেশ যেখানে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে সেখানে আমি এই সামান্য সেবা করার সুযোগ পেয়ে খুশি।’ প্রায় এক দশক আগে বিনা চিকিৎসায় তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরে সমাজসেবায় নেমেছিলেন ডুয়ার্সের ক্রান্তির বাসিন্দা করিমুল হক। ডুয়ার্সের ওই এলাকা থেকে একজন রোগীকে জলপাইগুড়ি নিয়ে যেতে অন্তত আড়াই হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হয়। সেখানে করিমুলকে কেবল গাড়ির তেলের খরচ দিলেই চলে। যাঁর সেই সাধ্যও নেই, তাঁকে নিজের পকেটের পয়সায় গাড়ির তেল কিনে হাসপাতালে পৌঁছে দেন এই সমাজসেবী।