যশ মোকাবিলায় প্রস্তুত পূর্ব মেদিনীপুর
ঘূর্ণিঝড় যশ (Yaas) মোকাবিলায় তৈরি দীঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই দীঘা (Digha) সহ উপকূল এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য হাজির নৌবাহিনী। সোমবার সকাল থেকেই উপকূলবর্তী এলাকায় দফায় দফায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়ায় ভরদুপুরেই অন্ধকার নেমে আসে। বিপর্যয়ের পূর্বাভাস! এদিন সন্ধ্যা থেকেই রামনগর-১ ও ২ব্লকের উপকূল এলাকা থেকে সাধারণ মানুষজনকে বিভিন্ন মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টার এবং ফ্লাড শেল্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি ব্লকে এজন্য টিম তৈরি করা হয়েছে। সাইক্লোন মোকাবিলায় সোমবার দফায় দফায় বৈঠক করেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হবে। কিন্তু, নবান্ন থেকে নির্দেশ যায়, সাইক্লোন পূর্ব ঘোষিত সময়ের আগেই স্থলভাগে প্রবেশ করতে চলেছে। তাই রাতের মধ্যেই উপকূলের এবং ক্ষতির আশঙ্কা আছে এমন এলাকার লোকজনকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসতে হবে। সেই খবর পাওয়ামাত্র ত্রাণশিবিরে মানুষকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়।
আম্পান সুপার সাইক্লোনের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই যশ মোকাবিলা করতে নামছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। গত বছর ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বেশকিছু গলদ সামনে এসেছিল। বিপর্যয় মোকাবিলায় জেলার টিমের অপেক্ষায় ছিল বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি। এবার তেমনটা করা যাবে না বলে পরিষ্কার জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। গাছ কেটে সরানো থেকে বিপর্যয় মোকাবিলায় গ্রাম পঞ্চায়েতকেও শামিল হতে হবে। এজন্য সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাব এবং পুজো কমিটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলায় সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজের জন্য ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স(এনডিআরএফ)-এর চারটি টিম এসেছে। তাঁদের আটটি দলে ভাগ করে রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১, হলদিয়া-সুতাহাটা প্রভৃতি জায়গায় রাখা হয়েছে। এছাড়াও সোমবার নিউদীঘায় নৌসেনা এসে পৌঁছেছে। প্রয়োজনে জলপথের পাশাপাশি স্থলভাগেও উদ্ধারকাজে ঝাঁপাবে নৌবাহিনী। রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছপালা এবং ইলেক্ট্রিক পোস্ট সরানোর জন্য প্রতিটি ব্লকে ২৫ থেকে ৩০টি টিম মজুত রাখা হচ্ছে। জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতকে সাইক্লোন বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য ক্লাব এবং পুজো কমিটিকে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে প্রতি দু’কিলোমিটার অন্তর একটি করে টিম তৈরি রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সাইক্লোনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় আসতে পারে বিদ্যুৎ পরিষেবায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ১৫০টি গ্যাংকে নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাতে মোট ১০৬০ জন কর্মী থাকবেন। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও যাতে দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পর্যাপ্ত টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
এদিন সকাল থেকেই জেলার নানাপ্রান্তে ঘূর্ণিঝড় সতর্কতায় মাইকিং করা হয়। দীঘায় সমুদ্রে স্পিডবোট নামিয়ে প্রচার চালানো হয়। একইভাবে হলদিয়ায় কোস্টগার্ড মাইকিং করেছে। জেলার প্রায় সর্বত্র হাইমাস্ট লাইট নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি এদিন সন্ধ্যায় বলেন, আমরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। অনেক মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছে। বাকিদের রাতের মধ্যেই নিয়ে আসার কাজ চলছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধারকাজে গতি আনতে প্রতি ব্লকে উপযুক্ত সংখ্যক টিম গঠন করা হয়েছে।