যশ মোকাবিলায় পূর্ব বর্ধমানে ৪৯টি রেসকিউ সেন্টার
দ্রুত এগিয়ে আসার ফলে প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে যশ (Yaas)। বুধবার ভোরে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে পৌঁছে যাবে সিভিয়ার সাইক্লোন। দুপুরে সাগরদ্বীপ ও পারাদ্বীপের মাঝখান থেকে যশ গতিপথ তৈরি করতে পারে। ‘সাইক্লোনিক আই’ থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা দূরে থাকলেও হাওয়ার গতিবেগ ভালোই থাকবে। তাই জেলায় ৪৯টি রেসকিউ সেন্টার প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বিডিও ও এসডিওদের নির্দেশ দেওয়া আছে পরিস্থিতি বুঝে সাধারণ মানুষকে সেখানে স্থানান্তরিত করতে হবে। সেখানে খাদ্য ও পানীয় জলের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে ঝড়ের পর জনজীবন সচল রাখাটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য সেচ বিভাগ, পিডব্লুডি, পিএইচই সব বিভাগ প্রস্তুত আছে। বর্ধমান শহরেও ১৪টি ত্রাণশিবির চিহ্নিত করেছে পুরসভা। পানীয় জল সরবরাহ ও নিকাশি থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার আধিকারিকরা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষ এমনিতেই বিপর্যস্ত, তার উপরে যশ নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। জোড়া ফলায় বিদ্ধ হওয়া থেকে মানুষকে বাঁচতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। জেলার ৪৯টি রেসকিউ সেন্টারে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে স্যানিটাইজ করে মানুষের থাকার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকের ভঙ্গুর বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে প্রয়োজনে মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে যাতে কোনও দেরি না হয়, তার জন্য প্রতিটি এলাকায় প্রশিক্ষিত পাঁচ-ছ’জন সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অনির্বাণ কোলে বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী রেসকিউ সেন্টারে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আগে থেকে স্কুল ও কলেজগুলিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলার দল থাকছে। পাশাপাশি প্রতি মহকুমায় একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত দল তৈরি রাখা হয়েছে। জেলা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার প্রতীক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেলায় সামান্য ঝড়, বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে ব্লক ও সাব ডিভিশনের আধিকারিকরা মানুষজনকে রেসকিউ সেন্টারে স্থানান্তরিত করবেন। আমাদের প্রস্তুতি কোনও অংশে কম নেই। ইতিমধ্যে দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মানুষ ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা পাবেন।
মঙ্গলবার থেকে বর্ধমান পুরসভার কন্ট্রোল রুমও চালু থাকছে। তবে বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের কাছে চিন্তার কারণ হয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও জলের পরিষেবা। সামান্য বৃষ্টিতেই বর্ধমান শহরের একাধিক রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় নাকাল হন শহরবাসীরা। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কম করে টানা তিনদিন বৃষ্টি চলবে। সেক্ষেত্রে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রচুর জল জমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুরসভার আধিকারিকরা। তবে তাঁদের দাবি, গাছ ভেঙে পড়া, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়া ও বিপর্যয়ে ভাঙা বাড়ি থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য তৈরি থাকছে ক্যুইক রেসপন্স টিম। বর্ধমান পুরসভার উদ্যোগে জেসিবি মেশিন, গাছ কাটার যন্ত্র, জেনারেটর, পানীয় জলের ট্যাঙ্ক তৈরি রাখা হয়েছে।
পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমিত কুমার গুহ বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। শহরের মধ্যেই ১৪টি ত্রাণ শিবির চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে। জলের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য পাম্পগুলিকে জেনারেটরের মাধ্যমে চালানো হবে। আশা করছি, সিভিল ডিফেন্স, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং আমাদের পুরসভার কর্মীরা একসঙ্গে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবেন।
এদিন ভাগীরথীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখেন পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলিতে তিনি নজরদারি চালানোর জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্বস্থলী-২ ব্লক প্রশাসনও এদিন বৈঠক করে।